লুটপাটের অঘোষিত স্লোগানে চলছে দেশ: পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। প্রথম আলো ফাইল ছবি

রাজনীতির মতো জনকল্যাণের একটি বিষয় এখন লুটপাটের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ‘লুটে নাও, লুটপাট করে দেশকে উজাড় করে দাও, মানুষকে ভিক্ষুক বানাও’—এ অঘোষিত স্লোগানে বাংলাদেশে সমস্ত কার্যক্রম চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদন’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

রাজনীতি এখন ক্যাসিনো–জুয়া থেকে শুরু করে সমস্ত লুটপাটের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। এর জন্য গণতন্ত্রের অভাবকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘দেশে যখন একদলীয় শাসন থাকে, গণতন্ত্র সংকুচিত হয়, তখন দেখা দেয় একনায়কত্ব। একনায়কত্বে আর কারও পরোয়া থাকে না।’

দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই কঠোর ব্যবস্থা যেন মাঝপথে থেমে না যায়। বাইশ পরিবারকে কবর দিয়ে যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ কয়েক হাজার পরিবারের দেশ হতে পারে না, লুণ্ঠনকারী-কালোটাকা ও লুটেরাদের দেশ হতে পারে না।’

মহাত্মা গান্ধীর কথা উল্লেখ করে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘গান্ধীজি সারা জীবন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়েছেন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন। দুনিয়াজুড়ে আজ হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা, বিভাজন ও লোভের চর্চা চলছে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা কবর দিয়েছি, তাকে পুনরুদ্ধার করার শত চেষ্টা চলছে। দুনিয়াজুড়ে শান্তির বাণী আজ ধুলায় লুটাচ্ছে। হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা ও লোভের অনুসরণের মধ্য দিয়েই দুনিয়ার অধঃপতনের সূচনা হয়েছে। এই অধঃপতনকে আমাদের রুখতে হবে।’

মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শাহবাগে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ছবি: প্রথম আলো
মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শাহবাগে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ছবি: প্রথম আলো

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক এবং মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদনের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে গান্ধীজি রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত, কারণ তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ নেতা ছিলেন। কিন্তু সেটাই তাঁর প্রধান পরিচয় নয়। তাঁর পরিচয়, তিনি ছিলেন মানুষের বন্ধু, মানবতাবাদী, শান্তিবাদী ও সত্যের উপাসক। সত্য ও অহিংসা ছিল তাঁর মূলনীতি। উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করতে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠন ও ব্যক্তি শতবর্ষব্যাপী যেসব আন্দোলন করেছেন, সেগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই ছিল সহিংস। কিন্তু গান্ধীজি ১৯২০ সালে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন, তা পূর্ববর্তী সব নেতার সব আন্দোলনকে অতিক্রম করে যায়। কারণ, মানুষ শান্তি পছন্দ করে। গান্ধীজি ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের ঐক্যের ভিত্তিতে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল আজ সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, জাতিতে-জাতিতে হিংসার আগুনে জ্বলছে। এই মুহূর্তে গান্ধীজির অহিংসার বাণী অত্যন্ত প্রয়োজন। মহাত্মা গান্ধীর অহিংসার অস্ত্র সব আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী।’

গান্ধীজি যে অসাম্প্রদায়িক ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন বলে মানববন্ধনে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। অসাম্প্রদায়িক, মানুষকে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ কিংবা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হবে না—এমন একটি পৃথিবীর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের চর্চার মাধ্যমে হিংসামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স।

মানববন্ধন শেষে শাহবাগ থেকে শান্তি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ‘যুদ্ধ নয় শান্তি, হিংসা নয় অহিংসা’ শীর্ষক স্লোগান দেওয়া হয়।