কৃষকের জন্য বানানো বাজারে বসেছে জুয়ার আসর

তারাগঞ্জ উপজেলায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভিন্নধর্মী কৃষিবাজারটি ১৪ বছরেও চালু করা হয়নি। বাজারে বেঁধে রাখা হয় গরু-ছাগল। গত বৃহস্পতিবার ওকড়াবাড়ি এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
তারাগঞ্জ উপজেলায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভিন্নধর্মী কৃষিবাজারটি ১৪ বছরেও চালু করা হয়নি। বাজারে বেঁধে রাখা হয় গরু-ছাগল। গত বৃহস্পতিবার ওকড়াবাড়ি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভিন্নধর্মী কৃষি বাজারটি কৃষকের কাজে আসছে না। ১৪ বছরেও বাজারটি চালু না হওয়ায় কৃষক উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারটিতে জুয়া ও নেশার আসর বসে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাজারটি ইকরচালী ইউনিয়নের ওকড়াবাড়ি বাজারের পাশে অবস্থিত। এখানে পণ্য রাখার জন্য তিনটি গুদাম রয়েছে। বিক্রির জন্য রয়েছে ছয়টি ছাউনি (শেড)। একটি শৌচাগার ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির জন্য দুই কক্ষের একটি ভবন রয়েছে।

এ বাজারের পাশে সরকারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারটি কৃষকের কাজে না এলেও নেশা ও জুয়াড়িদের কাজে লেগেছে। রাত আটটার পর সেখানে মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আসর বসে। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এসব বন্ধে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অধীনে পাইকারি বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইকরচালী ভিন্নধর্মী কৃষি বাজার নির্মাণ করা হয়। ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণ করা হয়। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে সহায়তা, কৃষিপণ্য বাজারজাত করায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সরাসরি অংশগ্রহণের লক্ষ্যে এটি তৈরি করা হয়। বাজারে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পণ্য এনে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পারলে পণ্য আবার যাতে বাড়ি নিতে না হয়, সে জন্য বাজারের সঙ্গে স্বল্প ভাড়ায় গুদামে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

এ ব্যাপারে ওকড়াবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও সহজে বিক্রয়ের লক্ষ্যে এই বাজার নির্মাণ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ১৪ বছরেও চালু না হওয়ায় আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার কৃষক।

গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির ভবনের দরজা-জানালা ভাঙা। শৌচাগারটি নষ্ট। ছাউনিগুলোর মেঝেতে বড় বড় গর্ত। সেখানে খড় রাখা হয়েছে। বেঁধে রাখা হয়েছে গরু-ছাগল। গুদামঘরের চারপাশে গোবরের স্তূপ।

কসাইপাড়া গ্রামের কৃষক মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘একনা কৃষকের মার্কেট নোয়ায়, গোয়ালঘর। সবায় গরু–ছাগল বান্ধে। গবরও নিগি পালা করি থোয়ছে। গন্ধে এটার পাশ দিয়া হাটা যাওছে না।’

মেনানগর গ্রামের আজমাল হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যা হইলে এটে কোনা নেশার আসার বইসে। জুয়া খেলাও চলে। বাধা করলেও শোনে না। উল্টাপাল্টা কথা বলে।’

জগদীশপুর গ্রামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘জুয়া মোর সংসার শেষ করি দিছে। মোর স্বামী কামকাজ না করি সারা দিন রাইত ওই বাজারোত জুয়ার আসরোত পড়ি থাকে। মুই কইলে ডাং-মাইর করে।’

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, ‘এত দিন বাজারটিতে জুয়া ও মাদক সেবনের আসর বসার অভিযোগ কেউ করেননি। এখন জানলাম। খুব শিগগির অভিযান চালানো হবে।’