ট্রাইকো কম্পোস্ট সারে সাফল্য

উৎপাদিত লিচেট সংগ্রহ করছেন কৃষক নিজাম উদ্দিন। সম্প্রতি পাকুন্দিয়ার খামা গ্রামে। প্রথম আলো
উৎপাদিত লিচেট সংগ্রহ করছেন কৃষক নিজাম উদ্দিন। সম্প্রতি পাকুন্দিয়ার খামা গ্রামে। প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও লিচেট ব্যবহারে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকেরা। ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির গঠন ও বুনট উন্নত করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়, পানির অপচয় রোধ করে। এ সার মাটির অম্লত্ব ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এ ছাড়া ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের সময় যে লিচেট (তরলজাতীয়) সংগ্রহ করা হয়, তা বিভিন্ন সবজি ও পানের বরজে ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ ফসলের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে করা যায়। তাই স্বল্প খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে উৎপাদিত এ সার ও লিচেট ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ প্রজেক্ট (এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘ট্রাইকো কম্পোস্ট’ উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার জমিতে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকেরা। ইতিমধ্যে উপজেলার খামা, আংগিয়াদী ও আদিত্যপাশা গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক এ প্রযুক্তিতে সার উৎপাদন ও ব্যবহার করছেন। তাঁরা ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের সময় যে লিচেট সংগ্রহ করা হয়, তা পানের বরজ ও বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। এতে উপজেলার অন্য কৃষকের মধ্যেও এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে।

টিন বা খড়ের চালাসহ একটি ছোট ছিদ্রবিশিষ্ট পাকা চৌবাচ্চা অথবা স্যানিটারি রিং দ্বারা বানানো হাউসে ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরি করতে হয়। এতে গোবর ২৮ শতাংশ, মুরগির বিষ্ঠা ৩৬ শতাংশ, সবজির উচ্ছিষ্ট ৫ শতাংশ, কচুরিপানা ২৫ শতাংশ, কাঠের গুঁড়া ৩ শতাংশ, নিমপাতা ১ শতাংশ ও চিটাগুড় ২ শতাংশ—এই অনুপাতে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এক টন মিশ্রণ পচাতে ৫০০ মিলি ট্রাইকো ড্রামা অণুজীব মেশাতে হয়। এতে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জৈব পদার্থ পচে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদিত হয় ও লিচেট পাওয়া যায়।

খামা গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন তিনি। তাঁর দুটি চেম্বার থেকে প্রথমবার ৫০ লিটার লিচেট সংগৃহীত হয়। এটা জমিতে ব্যবহার করে তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন। ফলন ভালো হওয়ায় অন্য কৃষকেরাও তাঁর কাছ থেকে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও লিচেট কিনে নিয়ে তাঁদের জমিতে ব্যবহার করছেন।

আংগিয়াদী গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম জানান, পানের বরজে ট্রাইকো লিচেট ব্যবহার করে পানের পচন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এতে পানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে ভালো দরে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি।

আংগিয়াদী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক জানান, ট্রাইকো কম্পোস্ট হলো একধরনের জৈব সার, যার মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা নামক একধরনের উপকারী ছত্রাক। বিভিন্ন জৈব উপাদান, যেমন গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, সবজির উচ্ছিষ্ট, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়া, ভুট্টার ব্রান, চিটাগুড়, ছাই ও নিমপাতা এবং ট্রাইকোডারমা ছত্রাকের অণুবীজ নির্দিষ্ট অনুপাতে একত্রে মিশিয়ে তা বিশেষ উপায়ে হাউসে জাগ দিয়ে ৪০-৪৫ দিন রেখে পচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়, তা-ই ট্রাইকো কম্পোস্ট। আর কম্পোস্ট সার তৈরির সময় হাউস থেকে নির্গত তরল নির্যাসকে ট্রাইকো লিচেট বলে।

কৃষি কর্মকর্তা হামিমুল হক জানান, ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষক দুভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রথমত, এ সার জমিতে ব্যবহার করে কৃষকেরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। অপরদিকে ট্রাইকো লিচেট ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগবালাই দমনে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে কৃষকদের রোগবালাই দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান বলেন, ট্রাইকো কম্পোস্ট থেকে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহার করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। অন্য কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তাই ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন ও লিচেট ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।