অসময়ের বন্যায় লালপুরে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী

নাটোরের লালপুরের বাকনাই এলাকার পানিবন্দী মানুষ। ছবিটি গতকাল বুধবার তোলা। ছবি: মুক্তার হোসেন
নাটোরের লালপুরের বাকনাই এলাকার পানিবন্দী মানুষ। ছবিটি গতকাল বুধবার তোলা। ছবি: মুক্তার হোসেন

অসময়ের বন্যায় নাটোরের লালপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের অধিকাংশই বসবাস করেন পদ্মার চরাঞ্চলে। বন্যা দুর্গত লোকজন আবাসন, বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে আছেন।

গতকাল বুধবার উপজেলার বিলমাড়িয়া, লালপুর ও ঈশ্বরদী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা তীরবর্তী নওসারা সুলতানপুর, দিয়াড়শঙ্করপুর, চাকলা বিনোদপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর, বাকনাই, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, কাগমারি, দক্ষিণ লালপুর, নওপাড়া, পানসিপাড়া, মহারাজপুর ও মোহরকয়া গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এসব গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার এখন পানিবন্দী। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সরিয়ে নিয়েছেন গরু-মহিষসহ গবাদিপশু। এলাকার সব টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না তাঁরা। ঘরে খাবার রান্না করার ব্যবস্থা নাই। অনেকের ঘরে চাল, ডাল, আটাও নেই।

বাকনাই দক্ষিণ পাড়ার আছিরন বেওয়া বলেন, ‘চর থেকে ঘাস তুলি আনি বাজারে বিক্রি করি চাল-আটা কিনে খাতাম। একন সব ডুবি গিছে। খাওয়ার কিনতে পাচ্ছিনি। না খায়ে আছি।’ মোহরকয়া গ্রামের মেছের আলী বলেন, ‘ঘরের জিনিসপত্রর নিয়া যাতে পারিনি। চুরির ভয়ে কষ্ট করি হলেও বাড়িত আছি। থাকার, খাওয়ার খুব কষ্ট। কয়দিন এভাবি থাকতে হবি বুঝতে পারছিনি।’ বাকনা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আজবার আলী জানান, অসময়ে বন্যা হওয়ায় মানুষ বন্যা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি। তাঁরা চরম দুর্ভোগে আছেন। স্থানীয় প্রশাসন কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।

বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বন্যাদুর্গতদের সাহায্যের জন্য তিনি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কিছু ত্রাণ দিয়েছেন। তবে তা খুবই সামান্য। সবার জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে।

লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তাঁর ইউনিয়নের দক্ষিণাংশের গ্রামগুলো বিশেষ করে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা পানির নিচে। এসব এলাকায় স্বল্প আয়ের লোকজন বসবাস করেন। তাদের পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী দরকার। তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

লালপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যুতি জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে প্রায় তিন হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা তৎপর আছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। বিলমাড়িয়া, লালপুর ও ঈশ্বরদী—এই তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা দেওয়া হবে।

নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শরিফুন্নেছা বলেন, গতকাল তিনি নিজে উপস্থিত থেকে বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের ১২০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। বাকিদের জন্য দ্রুত ত্রাণ পাঠানো হবে।