অদম্য মেধাবী, অনন্ত সম্ভাবনা

ব্র্যাক ব্যাংক–প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন (বাঁ থেকে) সারাহ বেগম কবরী, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, মেহজাবীন চৌধুরী ও ফেরদৌস আহমেদ। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।  ছবি: সাইফুল ইসলাম
ব্র্যাক ব্যাংক–প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন (বাঁ থেকে) সারাহ বেগম কবরী, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, মেহজাবীন চৌধুরী ও ফেরদৌস আহমেদ। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বর্ষা রানী যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন, তখন এক নারী তাঁকে বাসায় কাজ করানোর জন্য নিতে চেয়েছিলেন। বড় হয়েও বর্ষা মায়ের সঙ্গে অন্যের জমি থেকে আলু তুলতেন। গ্রামের মধ্যে প্রথম এসএসসিতে জিপিএ–৫ পাওয়ার পর তাঁর বাবার এক কেজি মিষ্টি কেনারও সামর্থ্য ছিল না।

রংপুরের তারাগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বর্ষার ভাষায়, ‘ভেবেছিলাম কলেজে পড়া হবে না। তবে প্রথম আলো ট্রাস্ট আশার আলো দেখায়। প্রথম আলো আমার জীবনে প্রথম আলো হিসেবেই দেখা দিয়েছে।’

গতকাল মঙ্গলবার ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্ষা কথাগুলো বলেন। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বর্ষার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা তুমুল করতালি দিয়ে বর্ষার সংগ্রামকে সম্মান জানান। বর্ষার সংগ্রামে সহায়তার হাত বাড়ানোর জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের জন্যও করতালি দিতে কার্পণ্য করেননি দর্শক-শ্রোতারা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো

‘অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা ২০১৮’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে শুধু বর্ষা নন, দিনমজুরের কাজ করা আবু হোসাইনের চিকিৎসক হওয়ার গল্প, বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করা রাকিব উদ্দিন, যিনি কিনা প্রকৌশল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভালো ফলাফলের জন্য প্রিন্সিপাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন অথবা দিনমজুরের কাজ করেও সুজন সরকার দেশের ‘রাষ্ট্রপতি’ হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছেন, তা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতোই শুনলেন। তাঁরা সবাই অদম্য মেধাবী। গতকাল ১২৭ জনের হাতে ক্রেস্ট, মেডেল ও উপহার তুলে দিতেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ব্যবসায়ী মিতুলী মাহবুব এবং প্রবাসী শাহেদ ইকবালও এই অদম্য মেধাবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

অনুষ্ঠানে রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে বাবা, মা অথবা পরিবারের সদস্য, অদম্য মেধাবীদের গল্প শুনে নিজেদের একটু উদ্দীপ্ত করতে এবং অদম্য মেধাবীদের শুভেচ্ছা এবং আর একটু সাহস জোগানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল ব্যক্তিরা।

চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকাদের বক্তব্য শোনা, সুযোগ পেলেই সেলফি তোলা, জাদুশিল্পী রাজীব বসাকের জাদু পরিবেশনা, পূজা সেনগুপ্ত ও তাঁর দলের নৃত্য পরিবেশনা, শিল্পী মিনার রহমানের গানে সুর মেলানোসহ নানা আয়োজনে সময় কাটান অদম্য মেধাবীরা।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের ট্রাস্টি (বাঁ থেকে) কুতুবউদ্দিন আহমেদ, রূপালী চৌধুরী ও জাহেদা ইস্পাহানী।  ছবি: প্রথম আলো
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের ট্রাস্টি (বাঁ থেকে) কুতুবউদ্দিন আহমেদ, রূপালী চৌধুরী ও জাহেদা ইস্পাহানী। ছবি: প্রথম আলো

আলোচনায় জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বললেন, সততা থাকলে জীবনে আর কিছুর জন্য চিন্তা করতে হবে না, আর এই সততা না থাকলে কোনো চেষ্টাতেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে অদম্য মেধাবীদের সংখ্যাটি যাতে আরও বাড়ে, সে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান অদম্য মেধাবীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এদের সংগ্রাম শুনলে মন ভরে যায়। আমরা আরও উৎসাহ পাই, উদ্দীপ্ত হই বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে।’

অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো, প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলোর পাঠশালা নামে স্কুল চালু করা, যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ প্রথম আলো ট্রাস্টের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে মতিউর রহমান বলেন, ‘১৯৯৮ সালে “যা কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো” স্লোগান নিয়ে প্রথম আলো যাত্রা শুরু করে। এ স্লোগানের পাশাপাশি এখন বলতে চাই, ভালোর সাথে প্রথম আলো, আলোর পথে প্রথম আলো।’

অদম্য মেধাবীদের মধ্যে কেউ যদি ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরি করতে চান তাঁকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন ব্র্যাক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিআরও চৌধুরী আখতার আসিফ। অদম্য মেধাবীরা যাতে বাবা–মাকে সব সময় সম্মান করেন এবং ভালো মানুষ হন সে আহ্বানও জানান তিনি।

রহমত আলী শাকিল, আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী ও কামরুল আলম মোর্তুজা তাঁদের বাধা পেরোনোর গল্প শোনান।  ছবি: প্রথম আলো
রহমত আলী শাকিল, আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী ও কামরুল আলম মোর্তুজা তাঁদের বাধা পেরোনোর গল্প শোনান। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর চর খিদিরপুরে প্রথম আলোর আলোর পাঠশালা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন বলেন, তিনিসহ অন্য শিক্ষকেরা বর্ষার সময় লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যান। রাজশাহীর বাবু ডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক কানাই দাস প্রতিদিন ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন বাইসাইকেলে।

অনুষ্ঠানে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ‘মানুষ মানুষের জন্য...’ গানটি গেয়ে শোনান। সুর মেলান অভিনেত্রী জয়া আহসান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলো ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান রূপালী চৌধুরী, জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ও সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী, প্রথম আলো ট্রাস্টের সদস্য জাহেদা ইস্পাহানী, নায়ক ফেরদৌস, অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী এবং নাগরিক টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুন নূর তুষার।

অনুষ্ঠানে ৩৭তম বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারে প্রথম হওয়া রহমত আলী শাকিল, ৫৯তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক বিজয়ী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংকের শারীরিক প্রতিবন্ধী কামরুল আলম মোর্তুজা (দোহার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার) তাঁদের জীবনের গল্প শোনান।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ব্যাংকের কমিউনিকেশনস ও কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বিভাগের প্রধান জারা জাবীন মাহবুব, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, আনিসুল হক, প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক মুনির হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন।