ফুডকোর্ট ভেঙে গাড়ি পার্কিং!

ফুডকোর্টের লাল ইটের ঘরগুলো ভেঙে বহুতল গাড়ি পার্কিং ভবন তৈরির পরিকল্পনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গত বুধবার বনানীতে।  ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ফুডকোর্টের লাল ইটের ঘরগুলো ভেঙে বহুতল গাড়ি পার্কিং ভবন তৈরির পরিকল্পনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গত বুধবার বনানীতে। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

কেবল দোকান নয়, মানুষ খাবে, গল্প করবে—এই চিন্তা থেকে তৈরি করা হয়েছিল বনানী ফুডকোর্ট। কিন্তু সেই ফুডকোর্ট আর চালু হয়নি। এখন ফুডকোর্টটি ভেঙে বহুতল গাড়ি পার্কিং ভবন করার কথা ভাবছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর দক্ষিণ পাশে ডিএনসিসির কমিউনিটি সেন্টার লাগোয়া পশ্চিম পাশের প্রায় এক বিঘা জায়গায় ফুডকোর্টটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের শেষ দিকে ফুডকোর্টের নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ২০১৮ সালে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, বনানী এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ওই এলাকার বাসিন্দাদের অবসর সময় কাটানোর কথা বিবেচনা করেই ডিএনসিসির তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক ফুডকোর্ট নির্মাণের এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

 স্থানীয় সূত্র জানায়, কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিম পাশের খালি জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। বনানী কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা জায়গাটি ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করতেন। পরে সেখানে ফুডকোর্ট নির্মাণ করা হয়। চারদিকে গাছপালায় ঘেরা ফুডকোর্টের পরিবেশ অনেক চমৎকার। কিন্তু সেটি চালু না করে সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করার ভাবনায় তাঁরা হতাশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফুডকোর্টটি না ভেঙেও এলাকার পার্কিং সমস্যার সমাধান সম্ভব।

নির্মাণকাজ শেষে ফুডকোর্টের প্রকল্প পরিচালক ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ঢাকা শহরে বসার মতো জায়গা কম। বনানী এলাকায় অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস আছে। তাদের জন্য বসার বা আড্ডা দেওয়ার জায়গা একবারেই কম। কেবল দোকান নয়, মানুষ খাবে, গল্প করবে—এই চিন্তা থেকে ফুডকোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।

বর্তমানে খন্দকার মাহবুব দেশের বাইরে আছেন। ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর কেউ এটি চালুর উদ্যোগ নেননি। গাছগাছালিবেষ্টিত ফুডকোর্টে রাতে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপ হয় বলে অভিযোগ স্থানীয় দোকানিদের।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, এখন ফুডকোর্টের জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করার কথা ভাবছে সংস্থাটি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনানী এলাকায় আগত লোকদের গাড়ি পার্ক করার জায়গা নেই। সেখানে বহুতল পার্কিং ভবন করে দিলে তারা গাড়ি রাখার সুবিধা পাবে। তাই সেখানে গাড়ি পার্কিং ভবন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফুডকোর্টের আশপাশের বাসিন্দারা আমার কাছে এসেছেন। তাঁরা বলছেন, সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো জায়গা নেই। তাই ফুডকোর্ট না করে বহুতল পার্কিংয়ের জায়গা করার অনুরোধ করেছেন তাঁরা।’

চলতি বছরের শেষের দিকে ফুডকোর্ট ভেঙে গাড়ি পার্কিং ভবনের কাজ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র।

এই স্থাপনার নকশা করেছিলেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। ফুডকোর্ট নির্মাণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক চেয়েছিলেন পরিত্যক্ত জায়গাটিতে এমন কিছু করতে, যাতে সবাই এটি ব্যবহার করতে পারে। পরে সেখানে ফুডকোর্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খোলা আকাশ দেখা, প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানোসহ সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কথা চিন্তা করেই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কী কারণে এটি চালু হয়নি, তা তিনি জানেন না।

ফুডকোর্টের জায়গায় বহুতল গাড়ি পার্কিং ভবন করার ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাশেফ মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘করপোরেশন এমন পরিকল্পনা নিয়ে থাকলে এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছু হবে না। আমি এর বিরোধিতা করব। তৈরি করা একটা স্থাপনা এভাবে নষ্ট করা ঠিক হবে না। কারণ, এটি নির্মাণে জনগণের অনেক টাকা এবং প্রয়াত মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেক শ্রম ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ফুডকোর্টের আশপাশের এলাকায় ভেতরের সড়কগুলোতে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ আছে। বহুতল ভবনের নিচে পার্কিং নিশ্চিত করা গেলে ফুডকোর্টটি ভাঙতে হবে না।