রোকেয়া হলে নিয়োগ-বাণিজ্য, তদন্ত থমকে আছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের কয়েকটি প্রশাসনিক পদে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগের তদন্ত থমকে আছে। এ অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অসুস্থ বলে জানিয়েছেন। কমিটি থেকে পরে অন্য একজন শিক্ষককে আহ্বায়ক হওয়ার অনুরোধ করলে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন। এতে কমিটি গঠনের এক মাস পরও তদন্তে অগ্রগতি নেই।

রোকেয়া হলে নিরাপত্তাপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেত্রী তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে হলের প্রাধ্যক্ষেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে গত ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন হলের কয়েকজন ছাত্রী। প্রমাণ হিসেবে কিছু অডিও রেকর্ডও সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করেন তাঁরা।

এ অভিযোগ তদন্তে ৫ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক বেগম আকতার কামালকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহাকে সদস্যসচিব করে গঠিত ওই কমিটির আরেক সদস্য রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক মনিরা বেগম।

কমিটির সদস্যসচিব লিটন কুমার সাহা গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি হওয়ার পর দুই দিন তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। এরপর আহ্বায়ক (বেগম আকতার কামাল) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শফিকুজ্জামানকে কমিটির আহ্বায়ক হওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি এতে অনীহা প্রকাশ করেন। এখন উপাচার্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সফরে রয়েছেন। তিনি না ফেরা পর্যন্ত তদন্তের বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

গত ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। সেখানে অফিস সহায়ক পদে একজন, বাগানের মালি পদে একজন, নিরাপত্তাপ্রহরী পদে তিনজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে তিনজন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। প্রতিটি পদেই জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেড অনুযায়ী ৮,২৫০-২০,০১০ টাকা বেতন ধরা হয়েছে। ৩১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ দিন। ১ সেপ্টেম্বর এসব পদে আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষা হলেও পরে নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

হল সংসদের এজিএস ফাল্গুনী দাসের সঙ্গে হলের এক কর্মচারীর কথোপকথনের একটি রেকর্ড ও ছাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী, অফিস সহায়ক পদে হলের এক কর্মচারীর ছেলে ও মালি পদে বাগানের এক মালির ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে যথাক্রমে আট ও পাঁচ লাখ করে টাকা নিয়েছেন হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান ও জিএস সায়মা প্রমি। আর নিরাপত্তাপ্রহরী পদে নিয়োগ দিতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক ইশাত কাশফিয়া।

গত ৩১ আগস্ট রাতে এসব তথ্য একটি ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী শ্রবণা শফিক। এর জন্য তাঁকে চিঠি দিয়ে হল কার্যালয়ে তলব করেন প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা। পরে কার্যালয়ে গেলে প্রাধ্যক্ষের সামনে ছাত্রলীগ নেত্রীদের দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন শ্রবণা। প্রাধ্যক্ষ বলেছেন, এই অভিযোগ সত্য নয়।