সেলিম প্রধানের দখল থেকে সওজের জমি উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেলিম প্রধানের দখলে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেলিম প্রধানের দখলে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসার হোতা সেলিম প্রধানের দখলে থাকা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ১০ শতাংশ জমি দখলমুক্ত করেছে প্রশাসন। আজ শনিবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে উপজেলার সাওঘাট এলাকায় সেলিমের মালিকানাধীন জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং লিমিটেডের অবৈধ দখলে থাকা ওই জমি উদ্ধার করা হয়।

সড়ক ও জনপথের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ফারুকীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সাওঘাট এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেটগামী অংশে অবৈধভাবে সওজের জমিতে সীমানাদেয়াল ও মূল ফটক এবং দোতলা ভবন নির্মাণ করে সেলিমের প্রতিষ্ঠানটি। দখল বৈধ করতে ওই দোতলা ভবনের নিচতলায় হাসিনা জামে মসজিদ ও দোতলায় এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এর পাশে কবরস্থান রয়েছে। তবে এতিমখানা অনেক আগে বন্ধ হয়ে যায়। সেটি ব্যবহৃত হতো কারখানার শ্রমিকদের থাকার জন্য। অবৈধ দখলের কারণে মহাসড়কের ভুলতা উড়ালসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ আটকে যায়। গত পাঁচ বছর চেষ্টা চালিয়েও ওই জমি উদ্ধার করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ।

গত সোমবার সেলিম প্রধান র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর ৩ অক্টোবর এ নিয়ে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশ হলে ওই জমি দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। আজ সকাল ১০টার দিকে সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের দখলে থাকা সওজের জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে দিনব্যাপী দুটি ভেকু দিয়ে জমিতে গড়ে তোলা ওই প্রতিষ্ঠানের সীমানাদেয়াল ও মূল ফটক এবং দোতলা ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে কয়েকবার উচ্ছেদের উদ্যোগে বাধা দেওয়া হলেও এবার কেউ বাধা দিতে আসেনি।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেটগামী অংশে সওজের ওই জমি সেলিম প্রধানের প্রতিষ্ঠানের দখলে ছিল। এ কারণে ভুলতা উড়ালসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ আটকে যায়। ১০ শতাংশ জমি দখলমুক্ত করাসহ আশপাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত জমি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মহাসড়কের পাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের সব ব্যাংকের চেক বই, এফডিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি এখানে ছাপা হয়। বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠানটি জরাজীর্ণ দেখা গেলেও ভেতরে রয়েছে বিলাসবহুল সব ইন্টেরিয়র ডিজাইন। এ ছাড়া ভেতরে আছে বিলাসবহুল সব আসবাব।

এলাকাবাসী জানান, দুই যুগ আগেও নান্নু মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়াদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। ক্যাসিনোসহ অবৈধভাবে কয়েক শ কোটি টাকার মালিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেলিম মিয়া হয়ে যান সেলিম প্রধান। তবে বিশাল বিত্তবৈভব আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে সেলিম প্রধান ও তাঁর পরিবারের ব্যাপারে এলাকার মানুষ কথা বলতে এখনো ভয় পান। সেলিম প্রধান গভীর রাতে দামি গাড়িবহর ও অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে কারখানায় আসতেন। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ ও স্থানীয় প্রভাবশালী অনেক নেতার আনাগোনা ছিল এখানে।

এ ব্যাপারে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের কর্মকর্তাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইট থেকে অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানকে নামিয়ে আনে র‌্যাব। তাঁকে আটকের পর তাঁর অফিস ও বাসায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, ১টি বড় সার্ভার, ৪টি ল্যাপটপ ও ২টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।