ফেসবুকে ভাগ্য খুলল ভিক্ষুক ছানোয়ারের

ছানোয়ার হোসেনের এই দোকানটি করতে সহায়তা করেছেন মামুন বিশ্বাস (নীল জামা পরা)। শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, ৫ অক্টোবর। ছবি: আরিফুল গণি
ছানোয়ার হোসেনের এই দোকানটি করতে সহায়তা করেছেন মামুন বিশ্বাস (নীল জামা পরা)। শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, ৫ অক্টোবর। ছবি: আরিফুল গণি

দেড় বছর আগেও হুইলচেয়ারে বসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করতেন ভূমিহীন প্রতিবন্ধী ছানোয়ার হোসেন (৪৫)। দুটি টাকার জন্য সবার কাছে হাত পাততে হতো তাঁর। অনেকে দিতেন, অনেকে আবার অবহেলায় মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে মানসম্মান ক্ষুণ্ন করে দিন শেষে যা পেতেন, তাতেই কোনো রকমে চলত তাঁর সংসার। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক ভিডিওর কল্যাণে ঘুরে গেছে ছানোয়ারের ভাগ্যের চাকা।

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ছানোয়ার এখন একজন মুদি দোকান ব্যবসায়ী। সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা করে বেশ চলছে তাঁর সংসার।

যমুনার চরে নিজের ঠিকানা হারিয়ে সানোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় থাকতেন। উপজেলার পৌর সদরে রূপপুর নতুন পাড়ায় ভাড়া বাসায় চলে তাঁর দিনরাত যাপন। প্রতিদিন হুইলচেয়ারে করেই এই বাসা থেকে ছানোয়ার গড়ে তোলা মুদিদোকানে যাতায়াত করেন।

সানোয়ারের শনিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জীবনের শুরুটা ভালো ছিল। কর্মজীবনের শুরুতে উপজেলার পাইলট স্কুলমাঠে ফুচকার দোকানে কাজ করতেন। ভালোই উপার্জন হতো। তবে জীবনের সবকিছু বদলে দেয় একটি দুর্ঘটনা।

সানোয়ার জানান, ২০১৪ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) কারণে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ে জমানো সব টাকা ফুরিয়ে পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। পরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। এ সময় তাঁর দুটি পা পঙ্গু হয়ে যায়। স্ত্রী ছাড়াও দুই ছেলেমেয়ের সংসারে অভাব–অনাটন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসার জন্য টাকা, আর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে অসুস্থ অবস্থাতেই হুইলচেয়ারে বসে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয়।

ছানোয়ার বলেন, পৌর শহরে ঘুরে ঘুরে যাকে সামনে পেতেন, তার কাছেই টাকার জন্য হাত পাততেন। এমনিভাবে একদিন মামুন বিশ্বাস নামের একজন তাঁর ভিক্ষাবৃত্তির কারণ জানতে পারেন। মামুন ছানোয়ারের বাড়িতে যান। তাঁর অবস্থা ভিডিও করেন। এরপরে ফেসবুকে সাহায্যের আবেদন চেয়ে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেন।

শাহজাদপুর উপজেলার আগনুকালী গ্রামের সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস। ফেসবুকে মামুনের দেওয়া ভিডিওটি দেখে দেশ–বিদেশের নানা পেশার মানুষ আর্থিক সহায়তা করেন। প্রায় ৭০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়। সেই টাকা দিয়েই ছানোয়ারের জন্য একটি মুদিদোকান করে দেন।

ছানোয়ার বলেন, এই দোকান থেকে দৈনিক গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। এতে তাঁর সংসার ভালোভাবে চলছে।

এর আগেও মামুন বিশ্বাস ফেসবুকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে বিভিন্ন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

মামুন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগমাধ্যমে সমাজের দুস্থ ও অসহায় মানুষের দুঃখ–দুর্দশা তুলে ধরি। দেশ–বিদেশের মানবদরদি মানুষ সেটা দেখে আর্থিক সহায়তা করেন। পরে সেই টাকা ছানোয়ার হোসেনদের মতো তৃণমূলের দুঃখী মানুষদের হাতে তুলে দিই।’