জনসংখ্যার চেয়ে জন্মনিবন্ধন বেশি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৭ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের জন্মনিবন্ধন হয়েছে, যা দেশের বর্তমান জনসংখ্যার চেয়ে প্রায় ৬৪ লাখ বেশি। এক ব্যক্তির নামে একাধিক নিবন্ধন থাকা, মৃত ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন বাতিল না হওয়ায় এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন না হওয়া, তথ্য যাচাইয়ে দুর্বলতা, পুরোনো সার্ভারে প্রবেশে সমস্যা, লোকবলসংকট—এমন নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম। তথ্য যাচাইয়ে দুর্বলতার সুযোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জন্মনিবন্ধন করাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জন্মনিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রারের কার্যালয়।

এমন পরিস্থিতিতে আজ প্রথমবারের মতো পালিত হবে ‘জাতীয় জন্মনিবন্ধন দিবস’। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের ৩ জুলাই জন্মনিবন্ধন দিবস পালিত হতো। গত বছরের অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ ৬ অক্টোবরকে ‘জাতীয় জন্মনিবন্ধন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।

২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন অনুযায়ী, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, বিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং জমি নিবন্ধনে বয়স প্রমাণের জন্য জন্মসনদ ব্যবহার বাধ্যতামূলক। শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক।

জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩ অক্টোবর পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন হয়েছে ১৭ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার ৮০৫ জনের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চলতি বছরের জুনে জানায়, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। আদমশুমারির মধ্যবর্তী অবস্থা তুলে ধরে এ তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। এই হিসাবে দেখা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে প্রায় ৬৪ লাখ বেশি জন্মনিবন্ধন হয়েছে।

>

জন্মনিবন্ধন হয়েছে ১৭ কোটি ১০ লাখ
দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ

জবাবদিহির অভাব থাকায় জন্মনিবন্ধন নিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ জমিলা হাসি। তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে জন্মনিবন্ধন বেশির বিষয়টি হাস্যকরও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জন্মনিবন্ধনে অসংখ্য দ্বৈততা রয়েছে। কেউ ঢাকার বাইরে থেকে নিয়েছে, আবার ঢাকা থেকে নিয়েছে। কেউ নিবন্ধন সনদ হারিয়ে ফেলায় নতুন করে আবার নিয়েছে। সার্ভারে সমস্যার কারণে একই নিবন্ধন একাধিকবার করার নজিরও আছে। মৃত ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন বাতিলেরও সুযোগ নেই। এক ব্যক্তির একাধিক নিবন্ধনের বিষয়টি স্বীকার করে জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল মানিক লাল বণিক বলেন, নতুন সফটওয়্যার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন সফটওয়্যার দ্বৈত নিবন্ধন খুঁজে বের করতে পারবে।

বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে ৫ হাজার ১০৭টি জায়গা থেকে জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে। দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের পাশাপাশি বিদেশের বাংলাদেশি মিশনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন কম

আইন অনুযায়ী শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মোট জন্মনিবন্ধনের তুলনায় জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের হার খুবই কম। জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের হিসাবে ২০১৮ সালে মোট জন্মনিবন্ধন হয়েছে ৭১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৭টি। এর মধ্যে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯০৩টি।

বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা তাহ্‌নিয়া সুলতানার ছেলের বয়স প্রায় চার বছর। সম্প্রতি তিনি ছেলের জন্মনিবন্ধনের আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, স্কুলে ভর্তি করাতে জন্মনিবন্ধন লাগবে, তাই এখন করানো হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সতর্ক হতে চিঠি

দেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট পাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জে জন্মসনদ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।

মানিক লাল বণিক বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ যেন জন্মনিবন্ধন না নিতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সার্ভারে প্রবেশে সমস্যা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের পাঁচ জন্মনিবন্ধকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জন্মনিবন্ধনের অনলাইন জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন ইনফরমেশন সিস্টেমে (বিআরআইএস) প্রবেশ করতে যথেষ্ট সময় লাগে। দিনের বেলা অধিকাংশ সময় সার্ভারে প্রবেশই করা যায় না। জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সার্ভারটির সক্ষমতা কম। নিবন্ধন কার্যালয়ের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। নতুন সফটওয়্যার স্থাপিত হলে এ সমস্যা আর থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।