সাগরে জাহাজ নোঙরে মানতে হবে নিয়ম

চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ‘আলফা’ নোঙর এলাকায়। পতেঙ্গা সৈকত বরাবর সবচেয়ে গভীর এ এলাকায় পণ্যবাহী বড় জাহাজ যেখানে–সেখানে নোঙর করায় এ দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার তালিকায় আছে ব্র্যাভো ও চার্লি নোঙর এলাকাও। এই তিন এলাকায় দুর্ঘটনা কমাতে এখন জাহাজ কোথায় নোঙর করবে, তা ঠিক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর। আবার কুতুবদিয়া থেকে এ এলাকায় জাহাজ আনার জন্য অভিজ্ঞ পাইলট নেওয়াও বাধ্যতামূলক করেছে বন্দর।

১ অক্টোবর এ নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। বন্দর এমন সময়ে এ নির্দেশনা দিল, যখন বন্দর জলসীমায় জাহাজ দুর্ঘটনা বাড়ছে। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দর জলসীমায় গত ১০ বছরে দুর্ঘটনায় পড়েছে ২৮৩টি জাহাজ। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে গত চার বছরে। এ সময়ে গড়ে প্রতিবছর ৪৬টি জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়েছে।

বন্দর জলসীমায় কোনো জাহাজ আনার আগে ওই জাহাজের মনোনীত প্রতিনিধিদের বন্দরকে জানাতে হয়। তবে বন্দর জলসীমায় আসার পর এক নোঙর এলাকা থেকে আরেক নোঙর এলাকায় যাওয়ার জন্য কোনো ঘোষণা দিতে হয় না। যেমন কুতুবদিয়া বরাবর সাগর থেকে বহির্নোঙর এলাকায় পণ্যবাহী জাহাজ আনার জন্য বন্দরের কাছে ঘোষণা দিতে হয় না। পাইলট নেওয়াও বাধ্যতামূলক নয়। এ কারণে বিদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেনরা বন্দর জলসীমায় নোঙর করতে এসে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। এখানকার স্রোত সম্পর্কে ধারণা না থাকায় প্রায়ই জাহাজের নোঙর সরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।

দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন এ পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে জেটির মতো বহির্নোঙরেও জাহাজ নোঙর করার আগে বন্দরের কাছে ঘোষণা দিতে হবে। পণ্যবাহী যেসব জাহাজের ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতার পরিমাপ) ১০ মিটারের বেশি, সেগুলো কুতুবদিয়া থেকে এনে বহির্নোঙরে নোঙর করা পর্যন্ত পাইলট নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তবে যেসব জাহাজের মাস্টার এই বন্দর জলসীমায় আগে জাহাজ নোঙর করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হতে পারে। নতুন নির্দেশনায় জাহাজ কোথায় নোঙর করতে হবে, তা–ও ঠিক করে দেবে বন্দর। এ জন্য বন্দরের আলফা নোঙর এলাকায় একসঙ্গে ২৬টি জাহাজ অবস্থান করার জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বৃহস্পতিবার বলেন, বন্দর জলসীমায় বিদেশি জাহাজের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতেই এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা যেমন কমবে, তেমনি জলসীমায় জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বেড়ে যাওয়ায় এ নির্দেশনার বিকল্প ছিল না।

বন্দর সূত্র জানায়, যেসব বড় জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না, সেগুলো বহির্নোঙরে নোঙর করে রাখা হয়। এরপর লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করে খালাস করা হয়। বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের ৬০ শতাংশই এভাবে বহির্নোঙরে খালাস করা হয়। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ কোটি টন।