পাহাড়চূড়ায় নড়বড়ে টাইটানিক

বান্দরবানের লামার পাহাড়চূড়ায় মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘টাইটানিক জাহাজ’। গত শুক্রবার দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
বান্দরবানের লামার পাহাড়চূড়ায় মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘টাইটানিক জাহাজ’। গত শুক্রবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

১৪ বছর আগে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা পাহাড়চূড়ায় তৈরি করা হয়েছিল ইটপাথরের বিশাল টাইটানিক জাহাজ। আটলান্টিক মহাসাগরে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের আদলে তৈরি করা এ জাহাজে ওঠার জন্য নির্মিত হয়েছিল আঁকাবাঁকা পাকা সিঁড়ি। এই জাহাজ দেখতে কয়েক বছর আগেও পর্যটকের ঢল নামত। কিন্তু এখন পর্যটক কমে গেছে। কারণ সমুদ্রপৃষ্ট থেকে দেড় হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর স্থাপিত টাইটানিকের এখন নড়বড়ে দশা।

২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল টাইটানিক জাহাজের উদ্বোধন করেন বান্দরবানের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শেখ আলা উদ্দিন। বাস্তবায়ন করেন তৎকালীন লামা উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ জাফরুল ইসলাম আজিজি। আর প্রায় ১৬ একর পাহাড়ি ভূমিতে ২০০৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৈরি হয় মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে উঁচু পাহাড়চূড়ায় নির্মিত হয় টাইটানিক জাহাজ। ২০ টাকার টিকিট কেটে কমপ্লেক্সে ঢুকতে হয়।

শুক্রবার দুপুরে ‘গিরিদ্বার’ নামে এখানকার ফটক পার হয়ে ভেতরে ঢুকে নজরে পড়ল বেহাল দশার পর্যটন কমপ্লেক্স। হাঁটার রাস্তাগুলোয় শ্যাওলার
আস্তর। বহু আগেই ভেঙে গেছে টাইটানিকে ওঠার সিঁড়ির রেলিং। সর্বত্র ময়লা আবর্জনা। দুজন কর্মচারী বিশাল কমপ্লেক্স দেখাশোনা করেন। ফরিদ আলম নামের একজন থাকেন ‘গিরিদ্বারে’ টিকিট বিক্রির জন্য। অন্যজন রাস্তার ওপর জমে থাকা লতাপাতা পরিষ্কার করেন।

ফরিদ আলম (৩৭) প্রথম আলোকে বলেন, টাইটানিক দেখতেই লোকজন মিরিঞ্জায় আসেন। তিন-চার বছর আগেও টাইটানিক দেখতে দিনে অন্তত এক হাজার পর্যটক আসত। এখন দুই থেকে বিশজন আসেন। টাইটানিকসহ এখানকার সব স্থাপনার সংস্কার জরুরি।

কুমিল্লার দাউদকান্দির ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন (৪৫) শুক্রবার পরিবার নিয়ে টাইটানিক দেখতে আসেন। কিন্তু টাইটানিকের এই নড়বড়ে অবস্থা দেখে হতাশ হন। তাঁর আশঙ্কা, ইটপাথরের এই টাইটানিক ঘূর্ণিঝড় কিংবা ঝোড়ো হাওয়ার ধাক্কায় ধসে পড়লে অনেক প্রাণহানি ঘটবে।

>

১৬ একর পাহাড়ি ভূমিতে ২০০৩ সালে তৈরি হয় মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের পশ্চিমে উঁচু পাহাড়চূড়ায় নির্মিত হয় টাইটানিক জাহাজ।

পর্যটক টানতে কমপ্লেক্সে তৈরি হয়েছিল সুরম্য ‘গিরিদ্বার’, রাত্রিযাপনের বাংলো-বনরত্না। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পাহাড়ে খাদে তৈরি হয় গোলঘর-মালঞ্চ। পূর্ব দিকে সুখী ও দুঃখী নামে এক হাজার ফুট উঁচু দুটি জোড়া পাহাড়। পাহাড়ের খাদে কুঁড়েঘরে বসবাস মুরং, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, বমসহ ১১ ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের। নড়বড়ে টাইটানিক জাহাজে উঠলে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। একসময় টাইটানিক জাহাজ থেকে বাইনোকুলার দিয়ে সুদূর কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত, সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ট্রলার ও জাহাজের বিচরণ দেখা যেত। কিন্তু এখন আর এসব ব্যবস্থা নেই।

পর্যটন কমপ্লেক্সের দৈন্যদশার কথা স্বীকার করেন লামা উপজেলার ইউএনও নূর এ জান্নাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবকাঠামোগত অবস্থা নাজুক হওয়ায় টাইটানিক দর্শক হারাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে কমপ্লেক্সটি তৈরি হলেও এত দিনে বড় ধরনের সংস্কার হয়নি।

উপজেলা পরিষদ সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে টাইটানিকসহ কমপ্লেক্সের নানা অবকাঠামো সংস্কার এবং কমপ্লেক্সের সেবা বাড়াতে ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর খবর নেই।