'কথা বলবি না, সামনে চল'

রাজধানীর চাঁদনি চকের ‘ফ্যাশন এশিয়া’ নামে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন শেখ মো. ফায়জুল হক। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দোকান বন্ধ করে মোহাম্মদপুরে নিজের বাসায় ফিরছিলেন ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি। ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে আসার সঙ্গে সঙ্গে চার যুবক ফায়জুল হককে ঘিরে ধরেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারজনের মধ্যে একজন তাঁর কানের কাছে বলতে থাকেন—‘কথা বলবি না। সামনে চল। যেভাবে বলব সেভাবে হাঁটতে থাক। সোজা সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে যা।’

পরে ফায়জুল হককে নিয়ে আটকে রাখা হয় রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলীবাগের পূর্ব আহমেদনগরের একটি বাড়িতে। সেখানে টানা কয়েক ঘণ্টা তাঁকে মারধর করা হয়। মারধরের পর ফোনে ফায়জুল হকের চিৎকার শুনিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করেন অপহরণকারীরা। তবে অপহরণের মাত্র ১৭ ঘণ্টার মধ্যে মিরপুরের ওই বাড়িতে আজ সোমবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে ফায়জুল হককে উদ্ধার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। ফায়জুল হককে অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সোহাগী বেগম (৪৮), সোহাগীর ছোট বোন রিতা (৪০), সোহাগী বেগমের মেয়ে স্বর্ণা (২২) ও ছেলে শয়ন (১৯) এবং শয়নের বন্ধু জাওয়াদকে (২০) আটক করা হয়।

থানায় আনার পরও মারধরের কারণে আঁতকে উঠছিলেন ফায়জুল হক। তাঁর ভাই শেখ মো. ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে ঘিরে রেখেই চারজন নিয়ে যান সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের দিকে। যাওয়ার পথে একটি মাইক্রোবাসে ওঠানো হয় তাঁকে। পাশে ছিল আরেকটি মোটরসাইকেল। মাইক্রোতে করে ফায়জুলকে প্রথম নেওয়া হয় মিরপুর-১ নম্বর চত্বরের আগে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে। সেখান থেকে রিকশায় করে শাহ আলীবাগে ধানখেতে মোড়ের পাশে ছয় তলার একটি ফ্ল্যাটে।’

ফজলুল হক বলেন, ‘যে বাসায় আমার ভাইকে রাখা হয়, সেখানে আরও তিন নারী ছিলেন। তাঁকে আলাদা করে একটি ঘরে নিয়ে মারধর করা হয়। টানা কয়েক ঘণ্টা ফায়জুলকে বেদম পেটানো হয়। এ সময় আমাকে ফোন করে ভাইয়ের চিৎকার শোনায় অপহরণকারীরা। তাঁরা বিকাশের মাধ্যমে রাত একটা পর্যন্ত কয়েক দফা টাকা দাবি করে। আমরা কয়েক দফায় ৮০ হাজার টাকা বিকাশ করি।’

সকালবেলা আবারও টাকা দাবি করে ফোন করে অপহরণকারীরা। এ কথা জানিয়ে ফজলুল হক বলেন, ‘রাতে টাকা দিলেও আমি সোজা নিউমার্কেট থানায় চলে যাই। নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম ও নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুল ইসলামকে পুরো ঘটনা জানাই। তাঁরা রাত একটার দিকে আমাকে জানান যে, ফায়জুল হককে মিরপুরের শাহ আলীবাগ এলাকায় রাখা হয়েছে। সকাল বেলা টাকা দাবির কথা জানালে আরও ১০ হাজার টাকা বিকাশ করি। তবে সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছিলাম। বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত করার পর আজ দুপুরে অভিযান চালিয়ে ফায়জুল হককে উদ্ধার এবং পাঁচ অপহরণকারীকে আটক করে পুলিশ।’

ফায়জুল হক তাঁর ভাইকে জানান, যারা তাঁকে ধরে নিয়ে যান এদের কাউকেই তিনি চেনেন না বা পরিচয় নেই। কেন ফায়জুলকে অপহরণ করা হলো সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না।

পুলিশ জানায়, ফায়জুলকে অপহরণকারীরা সবাই একটি পরিবারের সদস্য। এদের সবার বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। ঢাকায় এসে বাসা ভাড়া করে তারা। রাস্তার চলাচলকারী সহজ সরল ব্যক্তিকে এই চক্র ধরে নিয়ে যায়। তাদের ভাড়া করা বাসায় রেখে যাকে অপহরণ করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে অশ্লীল ছবি তুলে রাখে। একই সঙ্গে মারধর করে এরা টাকা আদায় করে। দীর্ঘ পরিকল্পনা করে কোনো ব্যক্তিকে তারা অপহরণ করে না।

পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাইফ প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণকারীরা ফায়জুল হককে ধরে নিয়ে মোট ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল। আমরা পুরো টাকাই উদ্ধার করেছি। এই চক্র আগেও এভাবে অপহরণ করেছিল। এবারের ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।