সবুজের দোকান বাগানবাড়ি

গাছ বিক্রি থেকে শুরু করে একটি বাড়ির অন্দর-বাহির সবুজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া—সব করে দেয় বাগানবাড়ি ডটকম। ঘরে বসেই একজন বৃক্ষপ্রেমী পেয়ে যাবেন পছন্দের গাছ, সার, বাগান করার নানা উপাদান ও সরঞ্জাম এবং বাগানসংক্রান্ত নানা সেবা।

মানি প্ল্যান্টগাছ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি ভবন সাজিয়েছে বাগানবাড়ি ডটকম। ছবি: সংগৃহীত
মানি প্ল্যান্টগাছ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি ভবন সাজিয়েছে বাগানবাড়ি ডটকম। ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের এপ্রিলে আট লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এই প্রতিষ্ঠান। এক বছরের মাথায় উঠে গেছে মূলধন, বেড়েছে পরিসর ও মুনাফা।

রাজধানীর কদমতলীর একটি বাড়ির ছাদবাগান সাজিয়ে দিয়েছে বাগানবাড়ি। ঢাকা, ৪ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম
রাজধানীর কদমতলীর একটি বাড়ির ছাদবাগান সাজিয়ে দিয়েছে বাগানবাড়ি। ঢাকা, ৪ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম

গত শুক্রবার বাগানবাড়ির বনশ্রীর অফিসে বসে কথা হলো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। তরুণ এই উদ্যোক্তা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম থেকে মার্কেটিংয়ে বিবিএ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। তিনি বললেন, ‘উচ্চশিক্ষা শেষে এমন একটি ব্যবসা করতে চেয়েছি, যার মাধ্যমে ব্যবসাও হবে, সমাজেও অবদান রাখা যাবে। তখন আমার বাল্যবন্ধু আসাদুজ্জামান সবুজ নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেয়।’

মো. আসাদুজ্জামান স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বর্তমানে বাগানবাড়ির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গিয়াস উদ্দিন বললেন, ‘শুরু থেকেই গাছ ও বাগান করার সরঞ্জামগুলোকে আমরা গ্রাহকের কাছে সহজলভ্য করতে চেয়েছি। প্রথমে ঢাকাকে আটটি জোনে ভাগ করি। এরপর সেরা নার্সারি ব্যবসায়ীদের নির্বাচন করি এবং আটজন ডেলিভারি ম্যান নিয়োগ দিই।’ গিয়াসের দাবি, বাগানবাড়ির সঙ্গে থেকে একজন নার্সারি ব্যবসায়ী দ্বিগুণ পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন।

বনশ্রীর একটি বাড়ির ছাদ সাজিয়েছে বাগানবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
বনশ্রীর একটি বাড়ির ছাদ সাজিয়েছে বাগানবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

গাছ ও বাগান তৈরির নানা সরঞ্জাম ছাড়াও বাগানবাড়ি ডটকম যেসব সেবা দিচ্ছে, তার মধ্যে ইনডোর গার্ডেনিং, ছাদবাগান, ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেনিং, ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং ও হরাইজন্টাল গার্ডেনিং সেবা অন্যতম। আরও আছে ‘এক্সপার্ট গার্ডেনার হোম সার্ভিস’। এই সেবার আওতায় রয়েছে বাগান পরিষ্কার, দেখভাল, পরিচর্যা ইত্যাদি সুবিধা। প্রতিদিন খরচ পড়বে ৬৮০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা।

গিয়াস বললেন, ‘গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রথম আমাদের একটি দক্ষ দল গ্রাহকের জায়গাটা দেখে আসে। পরে সে অনুযায়ী একটি নকশা ও পরিকল্পনা তৈরি করে। আমাদের নকশা পছন্দ হলে গ্রাহকের শখের বাগান বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করে দিই।’ একটি বাগান তৈরি করতে বাগানবাড়ির কর্মীদের তিন থেকে সাত দিন সময় লাগে। বাগানের কাজ শেষ হলে বিনা মূল্যে তিন মাসের বিক্রয়োত্তর সেবাও দেওয়া হয়। বাগানবাড়ির মাধ্যমে একটি বাগান করতে সর্বনিম্ন খরচ হবে ১০ হাজার টাকা।

শান্তিনগরে এক কক্ষের একটি অফিসে দুজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বাগানবাড়ির কর্মী সংখ্যা ১৬। ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মাসে বনশ্রীতে নেওয়া হয়েছে বড় অফিস। গিয়াস জানালেন, ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে এখন প্রতিদিন গড়পড়তা ৫০টি অর্ডার পাচ্ছে বাগানবাড়ি। আর গত এক বছরে মোট ১২৪টি বাগান প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তাঁদের প্রতিষ্ঠান।

মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ির ভেতরটা এভাবেই গাছ দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে বাগানবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ির ভেতরটা এভাবেই গাছ দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে বাগানবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে গিয়াস উদ্দিন জানালেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকার এক লাখ বাড়িকে সবুজায়ন করতে চায় বাগানবাড়ি ডটকম। তাঁরা আরও চান, যাঁরা বাড়িতে বাগান করবেন, তাঁদের হোল্ডিং ট্যাক্স ২০ শতাংশ কমানো হোক। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মৌখিক আলোচনাও শুরু হয়েছে বলে জানালেন তিনি।