স্ত্রী-সন্তানসহ শাহাবুদ্দিন আলমের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

শাহাবুদ্দিন আলম। ছবি: সংগৃহীত
শাহাবুদ্দিন আলম। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামভিত্তিক এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলম, তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে দুদক বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাঁদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার তথ্য মেলায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শাহাবুদ্দিন আলম ছাড়াও নোটিশ দেওয়া হয়েছে তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন আলম, দুই ছেলে সাজ্জাদ আরেফিন আলম ও শাহরিয়ার আরেফিন আলমকে। তিনি আরও জানান, আজ সোমবার সংস্থার পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের সই করা আলাদা আলাদা নোটিশ তাঁদের চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসা ও আগ্রাবাদের অফিসের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। নোটিশে তাঁদের আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদবিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে শাহাবুদ্দিন আলম জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁর নিজের, নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ঋণ জালিয়াতির মামলায় গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানের একটি কফি শপ থেকে শাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চট্টগ্রামের একটি থানায় ব্যাংক এশিয়ার করা ঋণখেলাপির মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।

শাহাবুদ্দিন আলম ব্যবসার জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ ঋণসুবিধা নিয়েছেন। তাঁর মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬২২ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯ টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখা থেকে তাঁর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৭০৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

এরপর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলম, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আলম, ব্যাংকটির অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, শাহাবুদ্দিন আলমের মালিকানাধীন লায়লা বনস্পতি প্রডাক্টস লিমিটেড ফারমার্স ব্যাংক থেকে ২৯ কোটি ৫১ লাখ ৮৫ হাজার ৮২০ টাকা আত্মসাৎ করেছে, যা সুদসহ ৩৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ওই অর্থের অবৈধ প্রকৃতি গোপন করার লক্ষ্যে জ্ঞাতসারে স্থানান্তর, হস্তান্তরপূর্বক লেয়ারিং করে মানি লন্ডারিং করেছে। পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনকভাবে ঋণের নামে ব্যাংকিং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ওই অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তরপূর্বক লেয়ারিং করেছে।

মামলার পর দুদক শাহাবুদ্দিন আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁদের সম্পদবিবরণীর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।