খালেদ আবার সাত দিনের রিমান্ডে, শামীম সিআইডির হেফাজতে

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি

অর্থ পাচার ও মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এ আদেশ দেন। এদিকে অর্থ পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য জি কে শামীমকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এর আগে পুলিশ গুলশান থানায় করা অর্থ পাচার মামলায় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ঢাকার আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

আর মতিঝিল থানায় করা মাদক মামলায় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোতালেব হোসেন ও রকিবুর রহমান। পুলিশ কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মতিঝিল থানার মাদক মামলায় খালেদকে তিন দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। তাঁকে আজ কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। মামলা দুটি তদন্ত করছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তিনি ঢাকার মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব, আরামবাগ ক্লাবসহ ফকিরাপুলের অনেক ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে রমরমা মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন। এসব অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে খালেদ কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এসব ক্লাবে দিনরাত জুয়া খেলা হতো, যার নিয়ন্ত্রণ ছিল মূলত খালেদের হাতেই। এ ছাড়া খালেদ খিলগাঁও-শাহজাহানপুর চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। খালেদ কোরবানির ঈদের সময় শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া, কমলাপুর, সবুজবাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখান থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদা আদায় করতেন। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান; বিশেষ করে রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ফকিরাপুলসহ বেশির ভাগ এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করার জন্য গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে রয়েছে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মাদক, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ। এ ঘটনায় র‍্যাব বাদী হয়ে খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে মামলা করে। পরদিন খালেদকে আদালতে হাজির করে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ৭ দিন করে ১৪ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালত সেদিন শুনানি নিয়ে অস্ত্র ও মাদক মামলায় যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রকিবুর রহমান বলেন, অর্থ পাচার মামলায় ২ অক্টোবর জি কে শামীমকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শামীমকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য শামীমকে হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি।

গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে বিদেশি মদসহ শামীমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পাশাপাশি তাঁর অফিস থেকে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা। এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, অর্থ পাচার ও মাদক মামলা করে। অর্থ পাচার মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। অপর দুটি মামলা তদন্ত করছে র‍্যাব।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ পায়, আসামি জি কে শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক ও জুয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। আর এই আসামির সহযোগীরা (দেহরক্ষীরা) উচ্চ বেতনভোগী, কুকর্মের সহযোগী। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও মূলত তাঁরা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে এসব অস্ত্রশস্ত্র বহন এবং প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল, গরুর হাটে চাঁদাবাজি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রতিবেদন দিয়ে আরও বলা হয়, আসামি শামীম অস্ত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদক ব্যবসা ও মানি লন্ডারিং করে আসছেন। তবে খালেদ ও শামীমের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেছেন, হয়রানি করার জন্য এই মামলা দেওয়া হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।