বিজয়া দশমী আজ

মহানবমীর সন্ধ্যায় গতকাল রাজধানীর সূত্রাপুরের মালাকারটোলা পূজামণ্ডপে।  প্রথম আলো
মহানবমীর সন্ধ্যায় গতকাল রাজধানীর সূত্রাপুরের মালাকারটোলা পূজামণ্ডপে। প্রথম আলো

শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ শেষ দিন, শুভ বিজয়া দশমী। আজ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে আজ মঙ্গলবার।

নানা ধর্মীয় আচারের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার সারা দেশে মহানবমী উদ্‌যাপিত হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় মহানবমীর আনুষ্ঠানিকতা। দুর্গতিনাশিনী দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে মনোজগতের আসুরিক প্রবৃত্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তি জাগরণে প্রার্থনা জানানো হয়।

সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহানবমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে কলাবাগান মণ্ডপে নিয়মিত পূজার ভেতর দিয়ে শুরু হয় প্রতিদিনকার আয়োজন। এরপর চলে প্রসাদ বিতরণপর্ব। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ছয়টায়।

মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মহানবমী উপলক্ষে মন্দির-মণ্ডপে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে প্রিয়জন বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তাঁদের পরনে ছিল নতুন পোশাক। অন্য ধর্মের লোকজনের উপস্থিতিও দেখা গেছে। দেবীর আশীর্বাদ কামনা করে কায়মনে চলে প্রার্থনা। দেবীর সঙ্গে সেলফি তোলাও চলে সমানতালে। মণ্ডপ ছেড়ে যাওয়ার আগে ভক্তদের কেউ কেউ প্রণামীও দেন।

সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ভিড় তুলনামূলক কম থাকলেও ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ ও কাঁসরের ধ্বনিতে মুখরিত ছিল মণ্ডপ। সন্ধ্যায় মণ্ডপগুলোয় বাড়তি আয়োজন ছিল আরতি প্রতিযোগিতা, আলাদা মাত্রা দিয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা।

ছোট বোন স্মৃতি পালকে সঙ্গে নিয়ে খামারবাড়ি পূজামণ্ডপে এসেছেন কলেজছাত্রী মৌমিতা পাল। প্রতিমার গড়ন, আকর্ষণীয় বেশভূষা, আলোকসজ্জার পাশাপাশি মণ্ডপের প্রবেশফটক দেখে মুগ্ধ মৌমিতা। খামারবাড়ি মণ্ডপের প্রবেশফটক দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘কী সুন্দর! ঠিক গুহার মতো।’ এ মণ্ডপটি ভারতের মহারাষ্ট্রের ইলোরা গুহামন্দিরের আদলে গড়া হয়েছে।

এই উৎসব ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হেঁশেলে রান্নার পদে পরিবর্তন আসে। সাধারণত দুর্গাপূজার দিনগুলোতে একেক দিন একেক খাবারের আয়োজন করা হয়। খাবারের তালিকায় কেউ আমিষ রাখেন, কেউ আবার নিরামিষ। রাতের খাবারে থাকে বন্ধুবান্ধবের সরব উপস্থিতি।

ছেলে অসীম বিশ্বাস আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। তাঁর মঙ্গল কামনা করে গাজীপুর থেকে ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে এসেছেন মা চন্দ্রিমা বিশ্বাস। ভক্তদের দীর্ঘ লাইনের তিনি বেশ পেছনের দিকেই ছিলেন। সেখানেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছোট মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার আগে মায়ের কাছে আশীর্বাদ নিতে এসেছিলাম। মেয়ে ভালো ফল করেছে। এবার এসেছি ছেলের জন্য।’