বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে একমত ছাত্রকল্যাণ পরিচালক

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান। ছবি: আবদুস সালাম
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান। ছবি: আবদুস সালাম

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবির একটি হলো বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা। এ বিষয়ে একমত হয়ে দাবি পূরণে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বুয়েটে জড়ো হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মধ্যেই আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের কাছে যান ছাত্রকল্যাণ পরিচালক। এ সময় তাঁকে ঘিরে ধরেন শিক্ষার্থীরা। তাঁর কাছে শিক্ষার্থীরা তখন নানা ধরনের ক্ষোভ জানাতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে তাঁর পদত্যাগের স্লোগানও ওঠে। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থলে বক্তব্য দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীর তাঁর কাছেও জানতে চান, উপাচার্য কেন ঘটনাস্থলে আসেননি। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তাঁরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক উপাচার্যের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ধরেননি। এতে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা প্রশাসনের নামে নানা ধরনের স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান পরে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানিয়েছেন, এর সঙ্গে তিনি একমত। তবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ক্ষমতা তো তাঁর হাতে নেই। সে জন্য তিনি এ দাবিটি পূরণে সহযোগিতা করবেন। তাঁর পক্ষ থেকে যতটুকু করার, তিনি তা করবেন।

শিক্ষার্থীরা এখনো বুয়েটের শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হবে; শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে আজ বিকেল ৫টার মধ্যে আসতে হবে এবং ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে; হলগুলোতে র‍্যাগিংয়ের নামে ভিন্নমতের ছাত্রদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়, তা বন্ধ করতে হবে; র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; আবরার হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; আহসানুল্লাহ হল ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় জড়িত ছাত্রদের আগামী ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে বহিষ্কার করতে হবে; আবরারের পরিবারের সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে ও বুয়েটে ছাত্রসংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমানকে ঘিরে ধরেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: মোশতাক আহমেদ
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমানকে ঘিরে ধরেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: মোশতাক আহমেদ

৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে যদি তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহি না করেন, তবে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন তাঁরা।

গত রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

সোমবার আবরার হত্যার প্রতিবাদে দিনভরই উত্তপ্ত ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। গতকাল দুপুর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাঁরা হলের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা রোববার রাতের ফুটেজ দেখানোর এবং দোষী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের দাবি জানান।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।