ডিএনসিসি-ডিএসসিসি: মশকনিধন কার্যক্রমে 'ভাটা'

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

‘এখনো ডেঙ্গু–আতঙ্কে আছি। মশা কামড়ালেই ভয় পাই। মশকনিধনে সিটি করপোরেশনের বিশেষ অভিযান চলার সময় এলাকায় ওষুধ ছিটাতে দেখেছি। এরপর গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।’

বলছিলেন পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনিসহ এলাকার আরও কয়েকজনের অভিযোগ, হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। অথচ ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি।

প্রসঙ্গত, এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাবমতে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ৯০ হাজার ২৭৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে ৮৮ হাজার ৭০৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৪৮।

গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৮, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মেরুল বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর এলাকায় গিয়ে কথা হয় সেখানকার মানুষের সঙ্গে। তাঁদের অনেকের অভিযোগ, সকালে তাঁরা এলাকায় লার্ভিসাইডিং করতে দেখেননি।

মধ্য বাড্ডা পোস্ট অফিস গলিতে কথা হয় এলাকার বাসিন্দা মো. সোহাগ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে কয়েকবার এলাকায় সিটি করপোরেশনের মানুষজনকে দেখেছি ওষুধ দিতে। এরপর থেকে আর চোখে পড়েনি।’

মধ্য বাড্ডার কবরস্থান এলাকার দোকানি চান মিয়া বলেন, ‘ভোর থেকে চায়ের দোকান খোলা রাখি। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশনের লোকজনকে মশা মারার ওষুধ দিতে দেখিনি।’

মশকনিধনে ডিএনসিসি আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ১০ দিন করে ২০ দিন চিরুনি অভিযান চালায়। তবে অভিযানের পর মশকনিধন কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ অনেকের। মশা মারার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ইমদাদুল হক বলেন, মশকনিধনের নিয়মিত কার্যক্রম এখনো চলছে। সব কটি ওয়ার্ডে বাড়তি লোকবল ও সরঞ্জাম দিয়ে মশার ওষুধ ও মশা মারার কার্যক্রম চালাচ্ছেন তাঁরা। তবে কাজের কোনো ঘাটতি আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন।

দক্ষিণেও ‘ঢিলেমি’

গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তিনটি ওয়ার্ডে ঘুরে মশকনিধন কার্যক্রমে ঢিলেমির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিএসসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ ছিটাতে দেখেছি। তবে এখন তিন-চার দিন পরপর ওষুধ ছিটানো হয়। তা–ও আগের মতো সব জায়গায় মশকনিধনকর্মীরা যান না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ধোঁয়া উড়িয়ে চলে যান তাঁরা।’

ওয়ার্ডের নবীনগর, বিদ্যুৎ গলি, শহীদ ফারুক সড়কের আশপাশ, বটতলা, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় বাসিন্দারা বলেন, মশকনিধনকর্মীদের নিয়মিত ওষুধ দিতে দেখা যায় না। সপ্তাহে এক–দুবার ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ওড়াতে দেখা যায়। তবে লার্ভা ধ্বংসের ওষুধ ছিটাতে দেখেননি তাঁরা।

৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল সরদার বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে তিনজন মশকনিধনকর্মী আছেন। ওয়ার্ডকে ১০ ভাগ করে তাঁরা নিয়মিত ওষুধ ছিটান। সেই হিসাবে একেকটি এলাকা তিন-চার দিন পরপর ওষুধ পায়। তবে বৃষ্টির কারণে আজ ছিটানো হয়নি।’

একই অবস্থা ডিএসসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডেও। ওয়ার্ডের বউবাজার সড়কের বাসিন্দা হাসনাহেনা খাতুন বলেন, ‘আমার বাসা নিচতলায়। মশা সব সময় বেশি। ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন বেশি ছিল, তখন আমার বাসার আশপাশে ওষুধ সকাল-বিকেল ছিটাতে দেখেছি। তবে মাস দেড়েক হলো সেই প্রবণতা কম। এখনো মশার কামড় খেতে হয়।’

৪৮ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম বলেন, সাধারণত বিশেষ কার্যক্রম (ক্রাশ প্রোগ্রাম) যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন ডিএসসিসি থেকে লোক বেশি দেওয়া হয়, ওষুধও বেশি থাকে। তখন প্রতিটি এলাকায় নিয়মিত ছিটানো যায়। তবে এখন পাঁচজন মশকনিধনকর্মী ওয়ার্ডে নিয়মিত ওষুধ ছিটান।

মশকনিধন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শরীফ আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।