'কবে থামবে মা-বাবার সন্তান কেড়ে নেওয়ার এ খেলা?'

নিহত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
নিহত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

‘মা-বাবার কাছ থেকে ছেলেকে কেড়ে নেওয়ার এ খেলা থামবে কবে’? এই প্রশ্ন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মেঘনাথ বিশ্বাসের। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই প্রশ্ন করেন তিনি।

৬৬ বছর বয়সী মেঘনাথ বিশ্বাস চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসের বাবা। আজ থেকে দুই বছর আগে ৬ অক্টোবর সকালে তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে খুন করা হয়। একইদিন রাতে বুয়েটে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। খুন হওয়ার আগেই দুজনেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। আর খুনে অভিযুক্তরা সবাই ছাত্রলীগের।

মেঘনাথ বিশ্বাস গতকাল তাঁর পোস্টে লিখেন, ‘আমার ছেলেকে ফেসবুকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরুপ স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে বাসা থেকে টেনেহিঁচড়ে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঠিক একই কারণে একই তারিখে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকেও পিটিয়ে হত্যা করা হলো। যারা হত্যা করেছে তারা কী মানুষ নয়! তারা কী একটু ও ভাবে না অন্যদের মতো এ ছেলেরও বাঁচার অধিকার আছে। মা-বাবা কতটা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে, কতটা দুঃখ যন্ত্রণা সয়ে কতটা স্বপ্ন, আশা-ভরসা নিয়ে ছেলেটাকে বড় করে তুলেছে। কতগুলো দানবের কারণে আরও একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ অকালে ঝরে গেল। দিন দিন মানুষ এমন অমানুষ হয়ে যাচ্ছে কেন? আমাদের মতো সারাটা জীবন মা-বাবাকে এ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে। আমি বিস্মিত, মর্মাহত-বেদনাবিদুর।’

মেঘনাথ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর হলো ছেলে হত্যার বিচারই শুরু হয়নি। শেষ হয়নি তদন্ত। আসামিরা বেশির ভাগ জামিনে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। এক সুদীপ্ত হত্যার বিচার হলে আবরাকে পিটিয়ে মারার সাহস করত না অন্যরা।
২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরের সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা করেন।

পরে আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় ১৫-১৬ জনের নাম এসেছে। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেন সুদীপ্ত। এ ঘটনার জেরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে গত ৪ আগস্ট ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দিদারুল আলম মাসুমকে। তিনি চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ১২ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি মিজানুর রহমান। এ জবানবন্দিতে প্রথমবারের মতো নির্দেশদাতা হিসেবে দিদারুল আলমের নাম আসে। যদিও দিদারুল দাবি করেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।