বাগমারায় আরেকজনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

রাজশাহীর বাগমারা থেকে আরও একজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনেরা বাগমারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

নিখোঁজ ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম (৩৬)। তিনি উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বয়স্ক কোরআন শিক্ষার শিক্ষক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ইমাম।

নজরুল ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।একই কায়দায় গত সোমবার রাতে একই ইউনিয়নের আবদুস সামাদ নামের এক স্কুলশিক্ষককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরও হদিস পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনদের ভাষ্য, গত রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে নজরুল ইসলাম বাড়ির পাশের একটি মসজিদে এশার নামাজ আদায় করছিলেন। এ সময় তাঁর পাশে অজ্ঞাত আরও দুই ব্যক্তি নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিরা তাঁকে অনুসরণ করেন। বাড়ির কাছে পৌঁছালে অনুসরণ করা ব্যক্তিরা তাঁকে আটক করেন। পরে তাঁকে আগে থেকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তোলা হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাঁদের পরিচয় জানতে চান। নিজেদের তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেন। পরে সাদাপোশাকের সাত-আটজনের দলটি নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে শয়নকক্ষে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে মুঠোফোন ও ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সনদসহ কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা একটি হেলমেট ফেলে যায়।

এ ঘটনার পর নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনেরা স্থানীয় থানাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে তাঁর খোঁজ করেন। কোনো হদিস না পেয়ে গতকাল রাতে নিখোঁজ ব্যক্তির চাচা আবুল কালাম আজাদ বাগমারা থানায় একটি জিডি করেন।

নিখোঁজ ব্যক্তির বোন শাহিনা খাতুন বলেন, তাঁর ভাই দাখিল পাস করার পর বয়স্ক ব্যক্তিদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। এ ছাড়া ইমামতি করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। তবে এখনো কোনো মসজিদে ইমামতি শুরু করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ নেই। কী কারণে প্রশাসনের লোকজন ধরে নিয়ে গেল, তা বুঝতে পারছেন না। তবে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে কোনো সন্ত্রাসী চক্র তুলে নিতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন তাঁরা। তিনি ভাইয়ের দ্রুত সন্ধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলামের ভাই আবু হেনা বলেন, তাঁদের বাড়ির কিছুটা দূরে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস ও একটি পিকআপ ভ্যান থেমে থাকতে দেখেছেন। নজরুল ইসলামকে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি সকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগামী শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) তাঁদের বড় ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, পুলিশ আবদুস সামাদকে ধরেনি। নিখোঁজের ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। নিখোঁজের বার্তা বিভিন্ন থানায় বেতারের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁরা নজরুল ইসলাম নামের কোনো ব্যক্তিকে ধরেননি। এ ছাড়া ঘটনার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের কোনো দল বাগমারায় যায়নি।

গত সোমবার রাতে একই কায়দায় আবদুস সামাদ নামের এক স্কুলশিক্ষককে তুলে নেওয়া হয়েছে। এখনও তাঁর সন্ধান মেলেনি।

এর আগে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর একই কায়দায় আবু জাফর ও বাহারুল ইসলাম নামের দুই ইমামকে ও ওই বছরের ১৫ অক্টোবর আবদুস সালাম নামের একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের চোখ বাঁধা অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়।