'মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কারও কাছে জিম্মি থাকতে পারে না'

আবরার, তোমার মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়। ছবি: প্রথম আলো
আবরার, তোমার মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়। ছবি: প্রথম আলো

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। আদর্শের ভিত্তিতে দল পরিচালনা না করে পেশিশক্তিনির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কি ভয়াবহ পরিণতি আনতে পারে, তা সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

আজ বুধবার দেওয়া এক বিবৃতিতে কথাগুলো বলেছেন দেশের ১১ বিশিষ্ট নাগরিক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই বিবৃতি দিলেন বিশিষ্টজনেরা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বিবৃতিটি পাঠান।

গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েকজন নেতা–কর্মী।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এক গভীর উৎকণ্ঠা ও অসীম বেদনায় নিমজ্জিত আজ পুরো জাতি। বুয়েট শিক্ষায়তনে সহপাঠী আবরার ফাহাদকে একদল ছাত্রলীগ কর্মী কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগ নামক যুব সংগঠনের সামাজিক অনাচার, মাদক ব্যবসা ও দুর্নীতির অবিশ্বাস্য নিদর্শন আমাদের দারুণভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ও যুব সংগঠনের এ বিপথগামিতা আমাদের হতাশ ও ব্যথিত করে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে রাজনৈতিক দলের আদর্শ বিহীন দেউলিয়া চরিত্র। আমাদের রাজনৈতিক দলসমূহ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে। শুধু তা–ই নয়, কোনো প্রকার আদর্শের ভিত্তিতে দল ও অঙ্গসংগঠন পরিচালনা না করে শুধু পেশিশক্তিনির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কি ভয়াবহ পরিণতি আনয়ন করে, তা আজ সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’

বিশিষ্টজনেরা বলেন, আবরার হত্যার শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাঝে আমাদের এ ভয়াবহ সংকট নিরসন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি মানবিক মূল্যবোধের যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আজ জাতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, শাসক দল ও সব রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ দল, অঙ্গসংগঠন, সরকার ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীল-সংস্কৃতির বীজ উপ্ত করতে হবে। বিশেষ করে সরকার ও সরকারি দলকে এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জাতি এক ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবে। কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন যুব ও ছাত্রসংগঠনের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না।

বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা দ্রুত এই সংকট থেকে জাতি ও দেশকে রক্ষা করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।

বিবৃতিদাতারা হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, সরোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।