আত্মহত্যার কারণ বদলে যাচ্ছে

ঝুলন্ত লাশ। ছবিটি প্রতীকী
ঝুলন্ত লাশ। ছবিটি প্রতীকী

ছাত্রীটির প্রত্যাশা ছিল এসএসসিতে জিপিএ–৫ পাবে। কিন্তু পায় এ গ্রেড। তার চেয়ে ‘কম মেধাবী’ অনেক সহপাঠী জিপিএ–৫ পাওয়ায় বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি পুরান ঢাকার এই কিশোরী। ফলাফল প্রকাশের দিন রাতেই আত্মহত্যা করে। ঘটনাটি চলতি বছরের ৬ মের।

নানা কারণে দেশে প্রতিবছর লাখে ৬ দশমিক ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। নারীদের মধ্যে লাখে ৬ দশমিক ৭ জন আত্মহত্যা করে। পুরুষের মধ্যে এ সংখ্যা কিছুটা কম, ৫ দশমিক ৫ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ ‘গ্লোবাল হেলথ অবজারভেটরি রিপোর্ট-২০১৮’–তে আত্মহত্যার এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ প্রতিবেদন আরও বলছে, উন্নত দেশের তুলনায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে আত্মহত্যার হার ৭৯ গুণ বেশি। সমস্যা চিহ্নিত করতে দেরি হওয়া, চিকিৎসা ও সহযোগিতার ঘাটতির কারণে এমনটা ঘটে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। বছর শেষে এ সংখ্যা পৌঁছে আট লাখে।

আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার প্রবণতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা উল্লেখ করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, বিষণ্নতার কারণে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করে। দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা ও প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আসক্তি বেড়েছে। ফলে প্রায় দুই দশকে আত্মহত্যার চিত্রের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। তবে মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে আজ দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হবে।

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস
দেশের মানুষ আত্মহত্যার উচ্চ ঝুঁকিতে
নারীরা বেশি আত্মহত্যা করছেন

তরুণেরা ঝুঁকিতে, বদলে যাচ্ছে কারণ
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দুনিয়াজুড়ে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ আত্মহত্যা। বাংলাদেশেও একই প্রবণতা দেখা গেছে বলে জানান মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মাদকের টাকা না পেয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন মিরপুরের মো. নাদিম (২৮)। শরীরের ৮৮ ভাগ পুড়ে মারা যান তিনি। তাঁর মা চান বানু বলেন, নাদিম পরিবারের সবার মুঠোফোন ও ঘরের জিনিসপত্রও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবু নেশার টাকা জোগাড় হয়নি বলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, তরুণেরা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে বেশি। এমনকি আত্মহত্যার কারণ ও ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে পরীক্ষায় ফেল করলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটত, এখন জিপিএ–৫ না পেলে হচ্ছে। মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, হতাশার জন্ম দিয়ে যা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাশাপাশি মাদকও একটি বড় কারণ।

নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেন
সারা বিশ্বে নারীদের তুলনায় পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার হার তিন গুণ বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেন। অথচ ভারতেও নারীর তুলনায় দ্বিগুণ পুরুষ আত্মহত্যা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, সামাজিক কারণে নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবহেলিত। পাশাপাশি যেকোনো বিষয়ে নারীকে হয় সহ্য করতে হয়, না হয় সংগ্রাম করতে হয়। ফলে এ ক্ষেত্রে তাঁরা অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, যা মোটেও উচিত নয়।