আবরার হত্যায় আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার সম্ভব হয়েছে পুলিশের নিষ্ঠার কারণে: মনিরুল

সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম (ফাইল ছবি)
সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম (ফাইল ছবি)

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে পুলিশের নিষ্ঠার কারণে। এ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। আবরার হত্যা মামলা তদন্তের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখা আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন, ডিএমপি সদর দপ্তরের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায় ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরার নৃশংসভাবে খুন হওয়ার তথ্য পেয়েই পুলিশ তৎপর হয়। এজাহার দায়েরের আগেই পুলিশ কাজ শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে যখন বিক্ষোভ চলছিল, তখনই পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছিল। তারা ১০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এজাহার দায়েরের পর আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এজাহারে নাম নেই অথচ পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন লোকের সংখ্যা তিনজন। এঁরা হচ্ছেন অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ও শামসুল আরেফিন। এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক তদন্তে নাম আসায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, অতীতেও অনেক ক্লুলেস ঘটনা গোয়েন্দা বিভাগ পেশাদারির সঙ্গে শনাক্ত করেছে। এই ঘটনাটির ক্ষেত্রেও ডিএমপি থেকে তাঁরা অঙ্গীকার করতে চান যে, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রত্যেককেই চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৬ জন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, এর আগেও ক্যাম্পাসে এ রকম হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এত দ্রুত গ্রেপ্তার পুলিশের পেশাদারি ও নিষ্ঠার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

মোট কতজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটি তাঁরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। রিমান্ড শেষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘এটি আমাদেরও তদন্তের মূল বিষয়। প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছি, পরবর্তী তদন্তে যদি তা না মেলে তাই আমরা এখনই মোটিভ সম্পর্কে বলতে চাচ্ছি না।’ হত্যার উদ্দেশ্যেই তাঁকে আনা হয়েছিল কি না, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেননি। অমিত সাহা জড়িত কি না, জানতে চাইলে বলেন, কোনো অপরাধের সঙ্গে কেউ ঘটনাস্থলে থেকেও জড়িত হতে পারে, কেউ ঘটনাস্থলে না থেকেও জড়িত হতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি, ডেটা বিশ্লেষণ এবং জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী তাঁরা মনে করছেন, ঘটনাস্থলে হয়তো তিনি ছিলেন না, কিন্তু ঘটনার সঙ্গে তাঁর পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল।

শুধুই ফেসবুক স্ট্যাটাস তাঁকে হত্যার মূল কারণ কি না, সে ব্যাপারে বলেন, ‘মোটিভটা আমরা পরে ক্লিয়ার করব।’

পুলিশ আগেই উপস্থিত হয়েছিল এমন একটি বিতর্কের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এখানে কাউকে গুরুতর আহত করা হয়েছিল, এই তথ্য পুলিশের কাছে ছিল না। ফলে রেওয়াজ হচ্ছে, প্রাধ্যক্ষকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশকে হলে ঢুকতে হয়। টহল টিম সেখানে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের বলা হয়েছে কিছু ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি, আমরা জানতে পারলে হয়তো এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটত না। কিন্তু জানার পরপরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ এ সময় আবদুল বাতেন পাশ থেকে বলেছেন, ৩৫-৪০ মিনিট বসে থাকার পর ছাত্ররাই বলেছে এখানে কিছু ঘটেনি।

তখন এই প্রতিবেদক জানতে চান, ৩৫-৪০ মিনিট বসে থেকেও এটা জানতে না পারা পুলিশের ব্যর্থতা বলে মনে করেন কি না, তখন মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি জানি না আপনি কখনো হলে ছিলেন কি না। হলের কোনো একটি নির্দিষ্ট রুমে যদি কোনো ঘটনা ঘটে, খুব চিৎকার-চেঁচামেচি না করলে বাইরে থেকে জানার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি হল, হোস্টেল এবং স্কুল বোর্ডিংয়ে থাকা মানুষ হয়ে বলছি, জানা খুব ডিফিকাল্ট। হল এত বড় থাকে। (পুলিশ) কোলাহলের শব্দ শুনেছিল, এ রকম খবরও আমরা পাইনি। শুনেছিল যে, এখানে গোলমাল হচ্ছে। কিন্তু গোলমালের যখন কোনো লক্ষণ পাইনি, তখন যে হলের ভেতরে ঢুকে যাবে, এটা তাদের কাছে মনে হয়নি।’