প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারি

আওতাধীন সংস্থাগুলোর প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণকল্পে বিভিন্ন অনুশাসনসংবলিত পরিপত্র জারি করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) এই পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রের মাধ্যমে মোট ১৪টি অনুশাসন অনুসরণের জন্য আওতাধীন সংস্থাসমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়েছে।

অনুশাসনগুলো হলো—
* নতুন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন তৃতীয় পক্ষ দ্বারা বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা; অর্থাৎ পরিবেশগত, সামাজিক ও কারিগরি প্রভাব এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দলিলাদি সংযুক্তপূর্বক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে।

* স্থাপনা নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে কারিগরি পরীক্ষা যেমন: মৃত্তিকা পরীক্ষা, সাইট নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্যাদি ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে।

* বিশেষ কারণ ছাড়া চলমান প্রকল্পের ব্যয়, মেয়াদ বৃদ্ধি, আন্ত-অঙ্গ সমন্বয় এবং প্রকল্প সংশোধন করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তা কর্তৃক সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

* প্রকল্পের ড্রয়িং ও ডিজাইন চূড়ান্ত করে মোট ব্যয় প্রাক্কলনের পর প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। তার পূর্বে কোনো অবস্থাতেই ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা যাবে না।

* প্রকল্পের আইটেমের পরিমাণ এবং আইটেম অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয়ের সঠিকতা ও যথার্থতা সংস্থাপ্রধান এবং সংস্থাপ্রধান কর্তৃক মনোনীত ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কর্তৃক যৌথভাবে প্রত্যয়িত হতে হবে। প্রাক্কলনের সঙ্গে রেট শিডিউল/বাজারমূল্যের অসামঞ্জস্যতা থাকলে সংস্থাপ্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

* ভেরিয়েশন, পুনঃ কার্যাদেশ, অতিরিক্ত কার্যাদেশসহ এ ধরনের সব কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে যৌক্তিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভেরিয়েশন, পুনঃ কার্যাদেশ, অতিরিক্ত কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে পিপিআর ৭৭, ৭৮, ৭৯ ধারা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে এবং এ-সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে প্রত্যয়ন সংযুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক।

* বিদ্যমান বিধিবিধান অনুসারে গঠিত অধিদপ্তর/সংস্থার পণ্যসংশ্লিষ্ট সেবা, কার্য ক্রয়সংক্রান্ত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি নিয়মিতভাবে পুনর্গঠন করতে হবে।

* প্রকল্পের আওতাভুক্ত কাজ/ক্রয়সমূহের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

* প্রতিটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকেরা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করবেন এবং সংস্থাপ্রধানেরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

* সংস্থাপ্রধানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে প্রকল্প এলাকা আনুষ্ঠানিক/অনানুষ্ঠানিক/ আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করবেন এবং চিহ্নিত সুনির্দিষ্ট অনিয়মসহ মন্ত্রণালয়/সংস্থায় প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন।

* ক্রয়কারী কর্তৃক যোগ্যতাসম্পন্ন সরবরাহকারী বা ঠিকাদারের তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে।

* প্রকল্প সাইটে সাইট অর্ডার বুকসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সব নথি/ডকুমেন্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

* প্রকল্প সাইটের দৃশ্যমান স্থানে প্রকল্পের সব তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে।

* প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন/নির্মিত/নির্মিতব্য স্থাপনা/অবকাঠামোসমূহের উপকরণসমূহের গুণগত মান উপযুক্ত ল্যাবরেটরি কর্তৃক নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিকে বিল্ডার্স কর্তৃক একক/যৌথভাবে বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমসমূহের ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে পত্র দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই পত্র জারি করে। এই পত্রের মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত প্রকল্পসমূহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিকে বিল্ডার্স কর্তৃক একক/যৌথভাবে বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমসমূহের ক্ষেত্রে পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮-এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দ্রুত প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, যুবলীগের নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিকে বিল্ডার্সের কর্ণধার। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।