লাশ হয়ে ফিরলেন দুই বন্ধু

সড়কে প্রাণ গেছে ছেলে মামুনুর রশিদের। মা আনোয়ারা বেগমের (ডানে) হাহাকার যেন থামছেই না। পেকুয়া, কক্সবাজার, ১০ অক্টোবর। ছবি: এস এম হানিফ
সড়কে প্রাণ গেছে ছেলে মামুনুর রশিদের। মা আনোয়ারা বেগমের (ডানে) হাহাকার যেন থামছেই না। পেকুয়া, কক্সবাজার, ১০ অক্টোবর। ছবি: এস এম হানিফ

মামুনুর, আসিফ ও জাহাঙ্গীর তিন বন্ধু। সব সময় একসঙ্গে থাকতেন। কোনো কাজ পেলে সেটাও একসঙ্গে করতেন তাঁরা। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ওই তিনজনকে আর কখনো একসঙ্গে দেখবেন না এলাকাবাসী।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বন্ধুর দুজন আজ মারা গেছেন।

নিহত দুজন হলেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার তেলিয়াকাটা এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে মামুনুর রশিদ (২৭) ও মোহাম্মদ মানিকের ছেলে মো. আসিফ (২৬)।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিন বন্ধু আজ নলকূপের যন্ত্রপাতি ট্রলিতে করে নিয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় নলকূপ বসানোর কাজে যাচ্ছিলেন। সকাল নয়টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং কলাতলী এলাকায় পৌঁছান। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে ওই ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই বন্ধু মারা যান। আহত হন জাহাঙ্গীর আলম (২৫)। জাহাঙ্গীর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জাহাঙ্গীরের বাবা কফিল উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলে এখনো জানেন না দুই বন্ধু মারা গেছেন। ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর অচেতন ছিলেন। সন্ধ্যায় চেতনা ফেরার পর জাহাঙ্গীর বারবার জানতে চাইছিলেন, বন্ধুরা কেমন আছেন? কোথায় আছেন? নিহত ব্যক্তিরা সুস্থ আছেন—এমন মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে জাহাঙ্গীরকে শান্ত রাখা হয়েছে।

বেলা তিনটার দিকে নিহত মামুনুর ও আসিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুজনের বাড়ি পাশাপাশি। এক উঠানে পাশাপাশি রাখা হয়েছে দুজনের লাশ। সারা বাড়িতে চলছে স্বজনদের মাতম। দাদা-দাদি ও মায়ের আহাজারি দেখে মামুনুরের তিন বছর বয়সী ছেলে নাজমুস শাহাদাতের চোখ দিয়েও ঝরছিল শোকের জল। পুরো গ্রাম যেন শোকে নিস্তব্ধ। কয়েক শ নারী-পুরুষ নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে ভিড় করেছেন।

মামুনুরের মা মনোয়ারা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, তাঁর ছেলে কাজে যেতে চাননি। তবে বন্ধুরা যাচ্ছেন বলেই মামুন তাঁদের সঙ্গে চলে গেলেন। আর কয়েক ঘণ্টা না পেরোতেই লাশ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।

চিরিংগা ফাঁড়ির হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক মাহবুব আলম বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ড ভ্যান ও ট্রলি উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিহত দুজনের লাশ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’