খুলনার 'থ্রি ডক্টরস' মেডিকেল ভর্তি কোচিং সিলগালা, পরিচালককে জরিমানা

খুলনায় মেডিকেল ভর্তি কোচিং ‘থ্রি ডক্টরস’ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে কোচিংয়ের পরিচালক ইউনুস খান ওরফে তারিমকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া অধিকতর তদন্তের জন্য তাঁকে ২৪ ঘণ্টার জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে ইউনুস খান খুলনা থানায় আটক থাকবেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এ তথ্য জানান।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের শান্তিধাম ফুল মার্কেট এলাকায় ৪০, সিমেট্রি রোডে ‘থ্রি ডক্টরস’ কোচিংয়ে অভিযান চালিয়ে ইউনুস খানকে আটক করা হয়। কোচিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মো. ইমরান খান ও মো. মিজানুর রহমান ওই অভিযান পরিচালনা করেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার এক মাস আগ থেকে সব ভর্তি কোচিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে থ্রি ডক্টরস কোচিং খোলা রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া ইউনুস খান একজন সরকারি চিকিৎসক। কিন্তু কর্মস্থলে না থেকে তিনি কোচিং সেন্টারে সময় দিচ্ছিলেন। তাঁর কোচিং সেন্টারের কোনো নিবন্ধনও (অনুমতি) ছিল না। এসব কারণে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে মেডিকেল অফিসারের পদ থেকে বরখাস্ত করা এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সুপারিশ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ইউনুস খান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপের) জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। সরকারি চিকিৎসক হয়েও তিনি কোচিং ব্যবসা ও নগরের রয়েল মোড়ের ফাতেমা ক্লিনিক নামের একটি বহুতল হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন। তিনি ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে কারসাজি করে কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। খুলনা মহানগরের কেন্দ্রস্থলে ফুল মার্কেটের কাছে একটি বহুতল ভবনে এই কোচিং সেন্টার অবস্থিত। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কারসাজি করে শিক্ষার্থী ভর্তি করার ব্যাপারে এ কোচিং সেন্টারটি জড়িত। এ বিষয়ে প্রথম আলোতে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।

বৃহস্পতিবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ইউনুস খান তাঁর ছাত্রদের মেসেজ দিয়েছিলেন এই বলে যে প্রশ্ন সহজ হবে এবং পরীক্ষার সময় তাঁদের আশপাশে গার্ডের শিথিলতা থাকবে। বিষয়টির অধিকতর তদন্ত দরকার। আর এ জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে দুজন নির্বাহী হাকিমের জায়গায় ১১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগে থ্রি ডক্টরস ভর্তি কোচিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত আগামীকালের পরীক্ষায় যাতে কোনো দুষ্কৃতিকারী পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সে জন্য জেলা প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন—সবাই তৎপর আছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল আহাদ বলেন, শুক্রবার এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় খুলনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে ৪৩টি কক্ষে সাড়ে তিন হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা। সকাল সাড়ে নয়টার মধ্যে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে হবে।

আরও পড়ুন: