রাজশাহীতে আ.লীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংঘর্ষ, গোলাগুলি

রাজশাহীতে বালুঘাট ইজারার জের ধরে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গুলি এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের মতিহার থানার ফুলতলা ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. জনি (৩০), যুবলীগের কর্মী মো. টুটুল (৩২) এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী সুজন আলী (২৮)।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি আবদুস সাত্তার, তাঁর দুই ছেলে ডনি, টনিসহ অন্তত ২০ জন অতর্কিতে হামলা চালালে তিনজন আহত হন। আহত অবস্থায় জনি ও সুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টুটুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জনির ঊরুতে গুলি লেগেছে। তাঁর এক হাতের দুটি আঙুলও কেটে গেছে। আর সুজনের কবজিতে গুরুতর জখম রয়েছে। তবে তাঁরা এখন আশঙ্কামুক্ত।

আহত লোকজনের স্বজনদের অভিযোগ, এলাকায় বালুঘাট চালু করার জন্য ২০১০ সালে আবদুস সাত্তার আহত জনিসহ অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলেন। এই টাকায় নিজের নামে মহাব্বতের মোড় এলাকায় একটি জমি কেনেন। আর বালু তোলার জন্য একটি যন্ত্র কেনেন। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রটিকে ‘বোমা মেশিন’ বলা হয়।
কিন্তু দীর্ঘ দিনেও বালুঘাট ইজারা নিয়ে চালু করতে পারেননি সাত্তার। এরই মধ্যে একটি জমি এবং একটি বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে বালুঘাটের জন্য চাঁদা দেওয়া ব্যক্তিরা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। টাকা দিতে না পারার কারণে কিছুদিন আগে জনি ‘বোমা মেশিন’ দখলে নেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

আজ শুক্রবার সকালে জনি তাঁর কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে বালু তোলার মেশিনটি মেরামত করছিলেন। তখনই তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে গেলে আহত দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার বলেন, তিনি অসুস্থ। ঘটনার সময়ও তিনি বাসাতেই ছিলেন। তাঁর দুই ছেলে সেখানে গিয়েছিলেন কি না, তা তিনি পরিষ্কার বলতে পারবেন না। তিনি বালুঘাট ইজারা নেওয়ার জন্য চাঁদা তোলার কথাও অস্বীকার করেন।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ভুল বুঝিয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি জবাব দিয়েছেন। ভবিষ্যতে ভালো একটা পদ পাবেন। তিনি দাবি করেন, তাঁকে বহিষ্কারের আদেশ এখনো কার্যকর হয়নি।

এদিকে বহিষ্কারাদেশ সম্পর্কে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবুল সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আবদুস সাত্তারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর বহিষ্কারের আদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।

সংঘর্ষের ব্যাপারে জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। গোলাগুলি হয়েছে কি না, তা বলতে পারব না।’ ওসি জানান, এ ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। আহত লোকজনের পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়নি। মামলা দায়ের হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।