ছাত্রলীগের সন্ত্রাসেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি: ভিপি নুরুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ভিপি নুরুল হক। ছবি: আসিফ হাওলাদার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ভিপি নুরুল হক। ছবি: আসিফ হাওলাদার

ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। সামগ্রিকভাবে ছাত্ররাজনীতি নয়, বরং সন্ত্রাসী ও দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য সবার দাবি তোলা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নুরুল হক এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে নুরুল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান।

ভিপি নুরুল হক বলেন, 'বুয়েটের শিক্ষার্থীরা শুধু সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা আসলে সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি বন্ধের দাবি তুলেছেন। আবরার ফাহাদকে কোন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হত্যা করেছে, সবাই ভালোভাবেই অবগত আছেন। ছাত্ররাজনীতি সব দেশেই আছে, সব প্রতিষ্ঠানেই ছিল, আছে ও থাকবে। সুস্থধারার মেধাভিত্তিক ছাত্রনেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করতে হবে।’ '

নুরুল অভিযোগ করে বলেন, 'আজকের কলুষিত ছাত্ররাজনীতির জন্য শুধু ছাত্ররাই দায়ী নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। কারণ তারা তাদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ আবাসিক হল প্রশাসনের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ চালাচ্ছে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকেরা নির্লজ্জের মতো জনগণের টাকায় বেতন নেন। তাঁরা আদৌ শিক্ষক কি না, সেটি আজকে জাতিকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে। সমাজ গড়ার কারিগর শিক্ষকেরা যখন নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে তাঁদের পছন্দের ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো নিয়ন্ত্রণের অশুভ তৎপরতা চালান, সেটিও জাতিকে ভাবিয়ে তোলে।’ '

ডাকসু ভিপি বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৫১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ এগুলোর মধ্যে শুধু একটি ঘটনা ছাড়া কোনোটিতেই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। বিচার না হওয়ার কারণেই বারবার এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড সারা দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে৷ আমরা চাই, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এবং শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের যে দখলদারি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও আধিপত্য বিস্তারের ধারা বন্ধ হোক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক৷

সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচ দফা দাবি জানান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক৷ এগুলো হলো আবরার হত্যাকাণ্ডসহ সব ছাত্র হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে আবাসিক হলগুলোতে গণ রুম-গেস্টরুম ও ছাত্রসংগঠনের দখলদারি বন্ধ করে প্রশাসনের মাধ্যমে প্রথম বর্ষ থেকে সিট বণ্টনের ব্যবস্থা, সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন, ভারতের সঙ্গে করা দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সব চুক্তি অবিলম্বে বাতিল এবং শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন নিশ্চিত করতে উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, ভিপি নুরুলের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসান, মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন৷