'নৌপথে চাঁদাবাজ' ইউপি চেয়ারম্যান অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটের চেঙ্গেরখালে নৌপথে চাঁদাবাজির মূল হোতা জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সেই চেয়ারম্যান মনফর আলীকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগরের জালালাবাদ থানা-পুলিশের একটি দল ইসলামগঞ্জ বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মনফরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৭টি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও ছোরা উদ্ধার করে পুলিশ।

আজ শনিবার সিলেট মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউপি চেয়ারম্যান মনফর আলীকে নৌপথে চাঁদাবাজ বাহিনী ‘মনফর বাহিনীর প্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করে। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছাড়াও পুলিশের ওপর হামলা, সন্ত্রাসী তৎপরতা, অপহরণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে ১০টি মামলা আছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি ও জালালাবাদ থানার তিনটি করে মামলা আদালতে বিচারাধীন। জালালাবাদ থানায় চাঁদাবাজি, পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র আইনে দায়ের করা ছয়টি মামলার তদন্ত চলছে।

জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহ আলম জানান, মনফরকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দায়ের করা মামলার নথি পর্যালোচনা করে যেসব মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন না, সেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তল, গুলি ও ছোরা উদ্ধারের ঘটনায় নতুন করে আরও একটি মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকা দিয়ে প্রবহমান চেঙ্গেরখাল সুরমা নদীতে মিলিত হওয়া একটি নদ। বর্ষাকালে সিলেট সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত চেঙ্গেরখাল দিয়ে বালু ও পাথরবাহী নৌযান চলাচল করে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের জাফলং-বিছনাকান্দির পাথর নিয়ে কোয়ারি থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক চলাচল করে নৌযানগুলো। গত বর্ষার শুরুতে চেঙ্গেরখালে চলাচলকারী নৌযানে চাঁদাবাজি শুরু হয়। দিনে ও রাতে শতাধিক নৌযান থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা তোলা হতো। থানা-পুলিশের প্রশ্রয়ে নৌযানগুলোতে চাঁদাবাজি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ নিয়ে গত ২৭ মে প্রথম আলোয় ‘জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনের পর জালালাবাদ থানার ওসি বদল হলে ১১ জুলাই প্রথম অভিযানে ইউপি চেয়ারম্যান মনফর আলীর ছোট ভাই আনফর আলীসহ দুজনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এলাকাবাসী বলছেন, ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই চেঙ্গেরখালে চাঁদাবাজি বন্ধে বিশেষ নজরদারি অব্যাহত রাখে। জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার ফাঁড়ির মাধ্যমে দিনে ও রাতে বিশেষ তৎপরতার অংশ হিসেবে গত ২৫ জুলাই মধ্যরাতে অভিযান চালানো হয়। জয়নাল আবেদিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করার সময় ইউপি চেয়ারম্যান মনফরের বাড়ি কালারুকায় পুলিশ আক্রান্ত হয়। ঘটনার পরদিনই মনফর আলী পাল্টা সমাবেশ করে মধ্যরাতের ঘটনাটি পুলিশের সাজানো নাটক দাবি করে বলেছিলেন, ‌‘এরপর পুলিশ এ রকম অভিযান চালালে প্রতিহত করা হবে।’ এরপর থেকে পুলিশকে চেঙ্গেরখালে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযান চালাতে দেখেননি এলাকাবাসী। প্রায় আড়াই মাস পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর আকস্মিক অভিযান চালিয়ে মনফরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা প্রথম আলোকে বলেন, মনফরকে গ্রেপ্তারের আগে বিভিন্ন অভিযানে তাঁর আপন ভাইসহ একাধিকজনকে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর কালারুকা গ্রাম থেকে জমির আলী ও একরাম আলী নামে মনফর বাহিনীর দুজনকে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মনফরের বাড়িতে কারিগর এনে দেশীয় অস্ত্র তৈরির কথা বলেছেন। চাঁদাবাজিতে এসব তৈরি অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয় দেখানো হতো। এ বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে, মনফরকে গ্রেপ্তারের খবরে কালারুকাসহ ঘটনাস্থল ইসলামগঞ্জ বাজারে মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। আজ ভোরে চেঙ্গেরখাল এলাকায় এলাকাবাসী নজরদারি করে দেখেছেন, মনফর আলী বাহিনীর কেউ ছিলেন না। কালারুকা ও ইসলামগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়িতে কারিগর এনে অস্ত্র তৈরি করার খবরে স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি মনফরকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ে রাখা আড়ালের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাঁদের।