বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন তিনি

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ঘরে ঘরে দ্রুত বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোট ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই টাকা তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরত দিয়েছেন।

টাকা ফেরত দেওয়া ব্যক্তির নাম মো. হারুন অর রশিদ। তিনি দুর্গাপুর উপজেলার কানাইল গ্রামের বাসিন্দা। হারুন বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৃথকভাবে নেওয়া ওই টাকা ফেরত দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, ভুক্তভোগী পরিবার ও হারুন অর রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের কানাই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে ১০ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন বসাবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হারুন অর রশিদ নিজ গ্রামের ৩৯ জন গ্রাহককে দ্রুত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবেন—এমন আশ্বাসে মিটারপ্রতি তিন হাজার টাকা করে নেন। প্রায় দুই বছর আগে এই টাকা নেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি। এমনকি গ্রামে এখনো বিদ্যুতের খুঁটি ও তার লাগানো হয়নি। সম্প্রতি গ্রামের বাসিন্দারা জানতে পারেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে কোনো টাকার প্রয়োজন নেই। শুধু সদস্য ভর্তি ফি ৫০ টাকা ও সংযোগের জন্য জামানত হিসেবে দিতে হয় ৬০০ টাকা। এরপরই গ্রামের বাসিন্দারা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে একত্র হয়ে স্থানীয় শাহজাহান মুন্সীর বাড়িতে সালিস বসান। ওই সালিসে হারুন অর রশিদ নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তবে এরপরও তিনি টাকা দিতে গড়িমসি করেন। পরে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নেবেন—এমন ভয় দেখানোর পর হারুন ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন। এ সময় নিজের অপকর্মের জন্য ক্ষমা চান।

ভুক্তভোগীদের তালিকায় ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বিষু মিয়া, মো. শাহজাহান ও আবদুর মজিদ। আজ শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে টাকা ফেরত পেয়েছেন বলেন জানান তাঁরা। তাঁরা বলেন, বিদ্যুতের আশায় অনেকে ঋণ করে কিংবা গৃহপালিত পশু বিক্রি করে হারুন অর রশিদকে টাকা দিয়েছিলেন। তাঁরা আগে জানতেন না যে বিদ্যুৎ পেতে কোনো টাকা লাগে না। বিষয়টি জানার পর তাঁরা টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে হারুনও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন।

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাকে বিদ্যুতের ঠিকাদার ফারুক মিয়া প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে তিন হাজার করে টাকা উত্তোলন করতে বলেছিলেন। তাই আমি ৩৯ জনের কাছ থেকে এই টাকা নিয়ে ফারুককে দিয়েছিলাম। পরে বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোট ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি। ফারুকের কাছ আমি এখনো ৭০ হাজার টাকার মতো পাই। আমার এই কর্মের জন্য আমি লজ্জিত।’

হারুনের অভিযোগের পর ফারুক মিয়া নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে একাধিকবার ফোন করার পরও তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

দুর্গাপুর পল্লী বিদ্যুতের উপমহাব্যবস্থাপক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া ও ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওই এলাকায় দ্রুত বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হবে।’