নিবন্ধনের শর্ত মানে না বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে চাইলে কয়েক ধাপের যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এগুলোকে বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে বর্জ্য সংগ্রহ করার অনুমতি দেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব শর্ত মানে না সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্জ্য সংগ্রহের অনুমতি পাওয়া একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের অনুমতি পেতে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক থেকে শুরু করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাদের কয়েক ধাপে টাকা দিতে হয়। ফলে শর্ত না মানলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না সিটি করপোরেশন।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি) নামে পরিচিত। তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহযোগী হিসেবে সিটি করপোরেশনে নিবন্ধিত। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটিতে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত আছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে চাইলে নির্ধারিত ফরমে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে আবেদন করতে হয়। ছয় পৃষ্ঠার ফরমে সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, প্রতিনিধির নাম, কর্মকাণ্ড পরিচালনা এলাকার নাম দিতে হয়। আবেদনে সংগ্রহকারীরা সংখ্যা, কতগুলো ভ্যান, আওতাধীন বাড়ির সংখ্যাও উল্লেখ করতে হয়।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকেরা (সিআই) ফরমে উল্লেখ করা এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্জ্য সংগ্রহকারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে কি না, প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নিয়ে এলাকার লোকজন সন্তুষ্ট কি না ইত্যাদি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সিআই নিজের মতামত দেন। পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিকে বর্জ্য সংগ্রহের অনুমতি দেন অথবা আবেদন বাতিল করেন।

গুলশান এলাকার বর্জ্য সংগ্রহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘পিডব্লিউসিএসপিদের আবেদনের পর আসল কাজ সিআইয়ের। সিআই উল্টাপাল্টা রিপোর্ট দিলে অনুমতি পাওয়া যায় না। তাই সিআই মাঠপর্যায়ে সরেজমিনে গেলে তাঁকে ম্যানেজ করা লাগে।’

সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধিত হলেও বেসরকারি সংগঠনগুলোর বিষয়ে কোনো নীতিমালা বা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সিটি করপোরেশনের নেই। বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনগুলো মাঠপর্যায়ে শর্ত মানছে কি না, সেটি দেখভালের কোনো ব্যবস্থাও সিটি করপোরেশনের নেই। প্রতিবছর অনুমতি নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের নজরদারি না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানই নিয়মিত নবায়ন করে না।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বর্জ্য সংগ্রহকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এলাকার বাসিন্দারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তাদের নিবন্ধন বাতিলের মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।