রংপুর মেডিকেল কলেজে কেনাকাটায় দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার ১

রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) যন্ত্রপাতি কেনার নামে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টচার্য গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ কামরুল আহসান। প্রণব ভট্টচার্য বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

দুদক জানিয়েছে, রমেকে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে গত ১২ সেপ্টেম্বর রংপুর দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করেন উপসহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান। মামলায় কলেজটির অধ্যক্ষসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামি করা হয় রমেক অধ্যক্ষ মো. নূর ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সারোয়াত হোসেন, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, তাঁর বাবা ও মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার, ছেলে আহসান হাবীব এবং ভগ্নিপতি ও ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমানকে।

দুদক জানিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া সৈয়দ কামরুল আহসান এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তদন্তে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, রমেকে ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই সেসব কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অধ্যক্ষ নূর ইসলাম বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কমিটি গঠন করেন। যথাযথ চাহিদাপত্র ও নমুনা ছাড়াই দরপত্র আহ্বান করেন এবং পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেন। ২০১৮ সালের ২১ জুন দরপত্র মূল্যায়ন করে একই তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দেন এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। ২৩ জুন কার্যাদেশ দেন। যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করলেও কার্যাদেশ পাওয়ার পঞ্চম দিনেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল জমা দেয়, যা অধ্যক্ষ ওই দিনই পাস করেন। প্রশাসনিক মঞ্জুরি পাওয়ার আগেই জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠিয়ে দেন। এভাবে মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকারকে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন।

দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ও দরপ্রস্তাব দাখিলকারী মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার (জাহের উদ্দিনের বাবা) ও আহসান হাবীব (জাহের উদ্দিনের ছেলে) এবং ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান (জাহের উদ্দিনের ভগ্নিপতি) পরিচয় গোপন করে পরস্পর যোগসাজশে সাজানো দরপত্র জমা দেন। এরপর কার্যাদেশ পেয়ে শর্ত অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের ব্যবহারের অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাৎ করেন।

রমেকের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সারোয়াত হোসেন একাই বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং সার্ভে কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নন–ক্লিনিক্যাল কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ইকুইপমেন্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকারকে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এই মামলার আসামি মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার (জাহের উদ্দিনের বাবা) এবং ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান (জাহের উদ্দিনের ভগ্নিপতি) দুদকের দায়ের করা আরেকটি মামলায় কারাগারে। পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতির কোনো ধরনের চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ওই মামলা করে দুদক।