সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু আর নেই

সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনুর ছবিটি নেওয়া হয়েছে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে
সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনুর ছবিটি নেওয়া হয়েছে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ‘পাক্ষিক অনন্যা’র সাবেক নির্বাহী সম্পাদক দিল মনোয়ারা মনু আর নেই। গতকাল রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তিনি রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

দিল মনোয়ারা মনুর স্বামী শামসুল হুদা প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে মনু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে তিনি মারা যান।


দিল মনোয়ারা মনুর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে সাংবাদিক অঙ্গনে। নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ‘বেগম’ পত্রিকার নূরজাহান বেগমের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। নারী আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ-আন্দোলনের অত্যন্ত পরিচিত মুখ ছিলেন। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকলেও নারী ও মানবাধিকার ইস্যুতে আন্দোলনে শামিল হতেন।

দিল মনোয়ারা নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহসভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির গণমাধ্যমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ১৯ ঘণ্টা আগেও তিনি সেখানে সক্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন প্রতিবাদ ও মানবিক ঘটনাগুলোর সংবাদ ও আন্দোলনের ছবি পোস্ট করেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর জানার পর শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বিভিন্ন পোস্টে ছেয়ে গেছে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনু আপাকে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকের প্রতি তাঁর মমতা ছিল। মনু আপার পায়ে কিছু সমস্যা ছিল, তিনি লাঠি নিয়ে হাঁটতেন। এরপরও প্রতিটি প্রতিবাদ, আন্দোলনে তিনি আসতেন। মানববন্ধনে দাঁড়াতে পারতেন না বলে চেয়ারে বসে অংশ নিতেও দেখা গেছে তাঁকে।’

দিল মনোয়ারা মনুর পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ইডেন কলেজে পড়াশোনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। ১৯৭৪ সালে ‘বেগম’ পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি যোগ দেন ‘পাক্ষিক অনন্যা’য়। ২৫ বছর ‘অনন্যা’য় থাকার সময় তিনি নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।

দিল মনোয়ারা মনুর স্বামী শামসুল হুদা ভূমি অধিকার ও সংস্কার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দিল মনোয়ারা মনুর লাশ তাঁর লালমাটিয়ার বাসায় আনা হয়েছে। লালমাটিয়ার বিবির মসজিদে বাদ জোহর তাঁর প্রথম জানাজা হবে। জুরাইন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।