বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের তার

বাঁশের খুঁটিতে ঝুলছে বিপজ্জনক বিদ্যুতের তার। কোথাও কোথাও মাটিতেও পড়ে আছে এসব তার। এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। গতকাল রংপুর নগরের পূর্ব পীরজাবাদ এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
বাঁশের খুঁটিতে ঝুলছে বিপজ্জনক বিদ্যুতের তার। কোথাও কোথাও মাটিতেও পড়ে আছে এসব তার। এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। গতকাল রংপুর নগরের পূর্ব পীরজাবাদ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

কাঁচা, আধা পাকা বাঁশের খুঁটিতে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। অনেকগুলো আবার একটির সঙ্গে একটি পেঁচিয়ে আছে। কোথাও আবার খুঁটি ভেঙে তার পড়ে রয়েছে মাটিতে। এ বিপজ্জনক চিত্র রংপুর মহানগরীর পূর্ব পীরজাদাবাদ এলাকার।

প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি সড়ক ও এর আশপাশে বাঁশের খুঁটিতে চেপে চলে গেছে বিদ্যুতের তার। ফলে অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়েছে ওই এলাকার শতাধিক পরিবার। সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ তাদের খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

পূর্ব পীরজাদাবাদ এলাকা রংপুর মহানগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। এখানে ২০১৬ সাল থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। নেসকোর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২ কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর নগরের পূর্ব পীরজাদাবাদ এলাকাটি এর আগে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন ছিল। পরবর্তী সময়ে ওই এলাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হলে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় সব বিদ্যুতের খুঁটি, তারসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তুলে নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকজন এসে বাঁশের খুঁটিতে বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের আপৎকালীন সংযোগ দেন। বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। তবু এ অবস্থা চলছে পাঁচ বছর ধরে।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের তার ঝুলছে। কোথাও কোথাও এসব তার ঝুলে ফসলি জমিতে পড়ে আছে। কিছু তার রয়েছে হাতের নাগালেই। কোথাও কোথাও তার আবার মাটিতে পড়ে আছে। অনেক জায়গাতেই বিদ্যুতের তার নিচু গাছের ডালের ওপর দিয়ে চলে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় ১০৪-১০৫ ঘর লোকের বাস। তাঁদের সবার বাড়িতে বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছর আগে পল্লী বিদ্যুৎ তাদের খুঁটি তুলে নিয়ে গেলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় পাঁচ বছর ধরে এলাকার এসব পরিবার মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। বৃষ্টিতে ভিজে বাঁশের খুঁটি বিদ্যুতায়িত হলে বা জমিতে পড়ে থাকা তার কারও শরীরের সংস্পর্শে এলে ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের দুর্ঘটনার কবলে পড়ার ঝুঁকি বেশি।

এলাকার বাসিন্দা ও চাকরিজীবী আজিজার রহমান বলেন, ‘সব সময় আমাদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কখন দুর্ঘটনা ঘটে, এমন ভাবনার মধ্যে কাটাতে হয়।’ আরেক বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আবদুর রহিম বলেন, ‘সন্তানদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। বাড়ির চারপাশে বিদ্যুতের তার ঝুলে আছে। আবার কোথাও কোথাও তার মাটিতে পড়ে আছে। এতে আমরা এই এলাকার শতাধিক পরিবার ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার এক বাসিন্দা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক জায়গায় বাঁশের খুঁটি ভেঙে গিয়ে বিদ্যুতের তার জমিতে পড়ে রয়েছে। বিষয়টি অনেকবার বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজলে এলাহী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি একাধিকবার বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে অবগত করেছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২, নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আজই (গতকাল রোববার) ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। সরেজমিনে দেখতে পেয়েছি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে।’