জিসান আসলে কোথায়?

তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ।
তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ।

তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। এর আগে পুলিশ ৩ অক্টোবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুবাইয়ে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার খবর জানায়। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছিল পুলিশ।

এখন সরকার বা পুলিশের কেউ জিসানের অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। অবশ্য গতকাল রোববার দুবাইয়ের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে গ্রেপ্তারের পর থেকে জিসান স্থানীয় পুলিশের হাতে আটক ছিলেন। গত সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তবে তিনি জামিন পেয়েছেন কি না, সে সম্পর্কে কূটনৈতিক ওই সূত্রের কাছে কোনো তথ্য নেই।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, জিসানকে দুবাই থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল। এখন শোনা যাচ্ছে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিটি জিসান ছিলেন না। অথবা জিসানের কাছ থেকে পাওয়া পাসপোর্টে তাঁর অন্য নাম ছিল।

পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, জিসান আহমেদের হাতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও ডমিনিকান রিপাবলিকের পাসপোর্ট রয়েছে। এই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি এত দিন দুবাইয়ে অবস্থান করছিলেন। তাঁর বিষয়টি ইন্টারপোলের সহায়তায় দুবাই পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। কাজেই এনসিবির কাছেই এ নিয়ে হালনাগাদ তথ্য রয়েছে। ওই সব সূত্র জানায়, জিসান নাম বদলে আলী আকবর চৌধুরী নামে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমিও পরিষ্কার নই। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছিল, তাকে দুবাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে দুবাই থেকে জিসানের মামলার বিষয়ে তথ্যও নিয়েছি। এখন নানা ধরনের কথা শুনছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও খোঁজ নিতে হবে।’

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জিসান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। সূত্রগুলো বলছে, একজন বড় ব্যবসায়ীর জিম্মায় ওই দেশের একটি আদালত তাঁকে জামিন দিয়েছেন। জামিনে থাকা অবস্থায় জিসানকে দুবাই ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আপাতত কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই। দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দুবাই থেকে লন্ডনে গিয়ে বসবাস করছেন তিনি।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জিসানকে আটক করা হলেও তাঁর জামিন পাওয়াটা স্বাভাবিক। কেননা তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেলে দিয়েছেন। অন্য দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি জিসান বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে না। তাকে ফিরিয়ে আনতে হলে আগে অন্য দেশের পাসপোর্ট বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া ভারত ও থাইল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। তবে জিসানের জামিনের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।’

কুমিল্লার ছেলে জিসানের বেড়ে ওঠা ঢাকার রামপুরায়। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে খিলগাঁও এলাকায় অস্ত্র হাতে নিয়ে খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপি সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে। তাদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। সেই তালিকায় জিসানের নামও ছিল। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে জিসান দেশ ছেড়ে চলে যান। এরপর তাঁর নামে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে।