ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ

সিটি করপোরেশনের মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার থেকে খুলনা নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না। কিন্তু এক দিন আগে গতকাল সোমবার সকাল থেকে নগরে এই রিকশার চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা।

নগরবাসীকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের জন্য মালিকেরা ওই পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

খুলনা নগরে থাকা রিকশার বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগ খুলনা মহানগর শাখার আহ্বানে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা। তাঁদের দাবি, নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল করতে দিতে হবে। চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

খুলনা নগরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, নগরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা নেই। যে সামান্য কয়েকটি রিকশা দেখা গেছে, সেগুলোর ব্যাটারি ও মোটর খুলে রাখা হয়েছে। রিকশা না থাকায় নগরের গলির সড়কগুলো থেকে মানুষকে হেঁটে প্রধান সড়কে গিয়ে ইজিবাইক ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমস্যা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তারপরও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেওয়ার দাবি জানাননি কেউই।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ইয়াসমিন হোসেন নামের এক অভিভাবককে দেখা যায় নিরালা এলাকা থেকে স্কুল ড্রেস পরা মেয়েকে নিয়ে হেঁটে প্রধান সড়কের দিকে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে স্কুলে দেরি হয়ে যাচ্ছে, তাই হেঁটেই যাচ্ছেন। রিকশা বন্ধ থাকবে তা আগে জানতে পারলে ভালো হতো। ব্যাটারিচালিত রিকশা ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে ভেতরের অলিগলিতে চলাচলের জন্য বিকল্প যানবাহন থাকতে হবে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ থাকার ব্যাপারটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নগরের অনেকেই। ভোগান্তির কথা খুব বেশি উচ্চারিত না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বন্ধ থাকার পক্ষে মতামত দিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।

ব্যাটারিচালিত রিকশা সম্পর্কে আজমুল মৃধা নামের একজন লিখেছেন, ‘সড়কের বুক চিরে যেন প্লেন চলত এত দিন।’ খান হারুন নামের একজন লিখেছেন, ‘খুলনাকে এমন পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে চাই আমরা।’ তবে কোনো কোনো মন্তব্যে চালকদের মানবিক দিকও তুলে ধরা হয়েছে।

নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ করতে গত মে মাস থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছেন সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। ওই সময় তাঁর দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে নগরের মধ্যে রিকশার চলাচল বন্ধ হওয়ার কথা। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে নগরে মাইকিংও করা হয়। ওই নিষেধাজ্ঞা পেয়ে অনেকেই চার্জিং পয়েন্ট গুটিয়ে নেন। কিন্তু জুন মাসের শেষ সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় সব কাউন্সিলর ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের জন্য আরও তিন মাসের সময় চান। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়। পরে দুর্গাপূজার কারণে সময় ১৫ দিন বাড়ানো হয়। বর্ধিত ওই ১৫ দিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ।

নগরে চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে ১৭ হাজারের মতো পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে নগরে কোনো পায়ে চালানো রিকশা দেখা যায় না। সব রিকশাতেই ব্যাটারি ও মোটর লাগিয়ে অটোরিকশায় পরিণত করা হয়েছে। নগরের মধ্যে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজারের মতো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে বলে মনে করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

গত জুলাই থেকে নগরে পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স নবায়ন শুরু হয়েছে। গত তিন মাসে মাত্র দুই হাজারের মতো রিকশা লাইসেন্স নবায়ন করেছে বলে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখা থেকে জানা গেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ৪ হাজার ২৯৯টি রিকশা লাইসেন্স নবায়ন করেছে।

সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফারুক হোসেন তালুকদার বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয় না।

তবে ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক ও চালকদের দাবি, ট্রেন, প্লেন থেকে শুরু করে সব যানবাহনেই দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেগুলো তো আর বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। তাহলে ব্যাটারিচালিত রিকশা কেন বন্ধ করে দেওয়া হবে!

বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, মানুষ আধুনিক ও শৌখিন হচ্ছে। এ কারণেই পায়ে চালিত রিকশায় ব্যাটারি ও মোটর লাগিয়ে অটোরিকশা করা হয়েছে। যখন রিকশা ছিল, তখন চালকেরা রিকশা চালিয়েছেন। কিন্তু এখন চালকেরা পায়ের রিকশা চালাতে চান না। তা ছাড়া অনেক বয়স্ক মানুষ ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে সংবার চালাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মেয়র বলেন, এবার আর সময় বাড়ানো হবে না। যেকোনোভাবেই হোক ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা হবে।