বুয়েট শিক্ষার্থীদের মাঠের আন্দোলন আপাতত স্থগিত

আবরার হত্যার আসামিদের স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
আবরার হত্যার আসামিদের স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

মাঠের আন্দোলন কাল বুধবার থেকে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রে যাদের নাম আসবে তাদের সবাইকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।

এর পাশাপাশি কাল বুয়েট ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দেওয়ার দাবিতে তাঁরা গণ শপথ করবেন।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুয়েটের শহীদ মিনারে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী একজন ছাত্র প্রতিনিধি। তিনি বলেন, তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে তিনটি দাবি ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। ইতিমধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, জবানবন্দি দিয়েছেন, রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তিনি বলেন ‘এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বিশেষভাবে তৎপর ছিলেন বলেই এত দ্রুত এত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার ব্যবস্থা স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাবে এবং সুষ্ঠুভাবে বিচার করার মধ্যে দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।’

এই ছাত্র বলেন, বাকি দাবিগুলো ছিল বুয়েট প্রশাসনের কাছে। ইতিমধ্যে বুয়েট প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। জড়িতদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, তদন্তের ভিত্তিতে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তে যদি নতুন কারও নাম উঠে আসে, তাহলে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। আববারের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেওয়া, বুয়েটে সাংগঠনিকভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করারও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। হলে হলে রাজনৈতিক কক্ষগুলো সিলগালা করা হয়েছে এবং যারা অবৈধভাবে থাকতেন তাদের বের করার কাজও শুরু হয়েছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে নির্যাতনের কথা জানাতে পারেন সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া হলে হলে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন হয়েছে এবং হচ্ছে।

এই ছাত্র তাদের সাত দিনের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে বলেন, বিগত কয়েক দিন তাঁরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছেন আবরারের লাশকে ‘পর্দা’ হিসেবে ব্যবহার করে আড়ালে-অন্তরালে অনেক স্বার্থান্বেষী সংগঠন নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এদের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই স্বার্থান্বেষী মহলের এজেন্ডায় বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানান। তাঁরা রাজপথে অবস্থান দীর্ঘায়িত করে এসব অপশক্তিকে এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কোনো সুযোগ দিতে চান না।

৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এরপর থেকেই আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষার কারণে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল করার পর আজ আবারও বুয়েটে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তবে আজ কোনো মিছিল-সমাবেশ হয়নি। নিজেদের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন। বুয়েট প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা করেন।