ভাইবোনের 'মানবতার যাত্রা'

বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন নাসরিন রহমান। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে।  ছবি: প্রথম আলো
বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন নাসরিন রহমান। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে। ছবি: প্রথম আলো

কর্মব্যস্ত মানুষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশ্রাম নেন। সময় কাটান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। কিন্তু তাঁরা ব্যতিক্রম। ছুটির দিনে ছুটে যান কেরানীগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায়। চিকিৎসাসেবা দেন অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে।

তাঁরা হলেন চিকিৎসক হাবিবুর রহমান ও তাঁর বোন নাসরিন রহমান। তাঁরা নিজেদের এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন জার্নি ফর হিউম্যানিটি বা মানবতার যাত্রা। একেক সপ্তাহে একেক এলাকায় ভাই–বোনের আলাদিন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের কার্যক্রম চলে। যে সপ্তাহে যে এলাকায় যান, তার আগেই মাইকিং করে লোকজনকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, শুক্রবার সকাল আটটার মধ্যে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা শুরু হয়। চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এ সময় দুস্থ রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধও দেওয়া হয়। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩৮টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে ৫ হাজার ৬৯৪ জন দুস্থ ও দরিদ্র রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন দুই ভাই–বোন।

হাবিবুর রহমান ২০০৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি ক্লিনিক পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তাঁর বোন নাসরিন রহমান সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

কেন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার এই উদ্যোগ নিলেন। জানতে চাইলে চিকিৎসক হাবিবুর রহমান বলেন, তাঁর বাবা মো. আলাউদ্দিন বিটিএমসির বস্ত্র প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের সব উপার্জন দিয়ে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারি মারা যান। বাবার স্মৃতিরক্ষায় আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও সাধ্য অনুযায়ী বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণ করছি।’

আটি ভাওয়াল এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘দুই ভাই–বোন আমাদের এলাকায় এসে গরিব–দুঃখী মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এতে আমরা ভীষণ উপকৃত হচ্ছি।’

খোলামোড়া এলাকার বাসিন্দা মালা রানী সরকার বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে পেটের সমস্যায় ভুগছিলাম। ওষুধ কেনার সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা নিতে পারছিলাম না। খবর পেয়ে ডা. নাসরিন রহমানের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে গিয়ে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা নিয়েছি। তাঁরা আমাকে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধও দিয়েছেন।’

চিকিৎসক নাসরিন রহমান জানান, মা ছাহিয়া খাতুনের অনুপ্রেরণায় বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা এই কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি ও তাঁর ভাই ব্যক্তিগত উপার্জনের অর্থ থেকে এই ক্যাম্পের খরচ জোগাচ্ছেন।

ভবিষ্যতে বাবার নামে কেরানীগঞ্জের নবাবচরের বাড়ির পাশে হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা আছে দুই ভাই–বোনের। যে হাসপাতালের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁদের।