আগাম পেঁয়াজ চাষে দেরি

দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর মধ্যে পাবনার সুজানগর উপজেলা অন্যতম। সেখানে প্রতিবছর আগাম পেঁয়াজের আবাদ হয়। কিন্তু এবার হুট করে বন্যার কারণে এ পেঁয়াজ আবাদ শুরু করা যায়নি। এতে চলমান পেঁয়াজসংকট মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে যাবে বলে কৃষকদের আশঙ্কা। 

কৃষকেরা জানান, ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ আবাদের মূল মৌসুম শুরু হয়। মার্চে এসব পেঁয়াজ বাজারে যাওয়া শুরু হয়। তবে সুজানগরে বিল এলাকায় কৃষকেরা সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের আবাদ করেন। তোলা হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নজুড়ে গাজনার বিল বিস্তৃত। সেখানে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়। স্থানীয় কৃষকেরা দুই দফায় দুই জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেন। মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর উঁচু জমিতে ‘মূলকাটা’ জাতের আগাম পেঁয়াজ রোপণ করা হয়।

সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ১৫ দিনের মধ্যে এ পেঁয়াজ জমিতে রোপণ হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে এ জাতের প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ পাওয়া যায়, যা সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হয়। এরপর কৃষক মূলকাটা পেঁয়াজ তুলে ‘হালি পেঁয়াজ’ নামে মৌসুমি পেঁয়াজ রোপণ করেন। কিন্তু এবার সম্প্রতি বন্যার কারণে এখনো মাঠে পানি রয়েছে। এতে কৃষক মূলকাটা পেঁয়াজ রোপণ করতে পারছেন না।

কৃষকেরা জানান, সম্প্রতি টানা বর্ষণে পদ্মা নদীর পানি পাড় উপচে কৃষিজমিতে ঢুকে গেছে। এখনো পানি নামেনি। হয়তো আরও বেশ কিছুদিন লাগবে। এবার মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদ কবে শুরু করা যাবে, আদৌ শুরু করা যাবে কি না তা নিয়ে নিশ্চয়তা নেই।

উপজেলার গোপালপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি বেলাল হোসেন জানান, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আগাম জাতের মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। কিন্তু এ বছর এখনো জমিতে পানি আছে। এই পানি কমে জমি পেঁয়াজ রোপণে উপযুক্ত হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। তখন আগাম জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভাটপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর চার বিঘা জমিতে মূলকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ করি। এতে দুই মাসে ৮০ থেকে ৯০ মণ পেঁয়াজ ঘরে আসে। কিন্তু এ বছর পানির কারণে সেপ্টেম্বর পার হয়ে অক্টোবরের এক সপ্তাহ চলে গেল, কোনো পেঁয়াজ রোপণ করতে পারিনি।’

দুর্গাপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি কামরুজ্জামান বলেন, আগাম জাতের মূলকাটা পেঁয়াজ মৌসুমি সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখে। কিন্তু এবার আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। নতুন পেঁয়াজ পেতে অনেকটা বিলম্ব হবে। এতে সংকট মোকাবিলাও কঠিন হয়ে পড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ময়নুল হক সরকার বলেন, মাত্র দুই মাসে এ পেঁয়াজ খাওয়ার উপযোগী হয়। ফলে প্রতিবছর ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই উপজেলার হাটবাজারে আগাম জাতের মূলকাটা পেঁয়াজ পাওয়া যায়।

এতে পেঁয়াজের বাজার বেশ স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু এবার আবাদ কিছুটা বিলম্ব হবে। এতে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতেও সময় লাগবে। তবে জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আগাম জাতের পেঁয়াজ রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।