কটিয়াদীতে ৪০ দিনের ব্যবধানে দুই যুগ্ম আহ্বায়ককে জখম

স্বেচ্ছাসেবক লীগ
স্বেচ্ছাসেবক লীগ

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ১ মাস ১০ দিনের ব্যবধানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই যুগ্ম আহ্বায়ককে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হতে হয়েছে। দুর্বৃত্তরা তাঁদের দিনের বেলায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে যায়।

সর্বশেষ হামলার শিকার হন যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুর হাসান (৩০)। গত সোমবার বিকেলে উপজেলা সদরের একটি রেস্তোরাঁর ভেতরে তিনি হামলার শিকার হন। বর্তমানে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।

এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে কটিয়াদী ডিগ্রি কলেজের সামনে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয় নুরুল হক। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক।

উভয় পরিবারের সদস্যদের ধারণা, মূল দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন।

মাহমুদুর উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়কের পাশাপাশি উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, কটিয়াদী আওয়ামী লীগে বিভক্তি চলছে। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ পায়। উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে দলটির ‘বিদ্রোহী’ মুশতাকুর রহমান বিজয়ী হন। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক তরিকুল মোস্তাক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ মূলধারা থেকে অনেকটাই বিচ্ছন্ন। তাঁদের ওপর সাংসদের আনুকূল্য নেই। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগে প্রকাশ্যে বিভক্তি নেই।

এমন অবস্থায় গত রোববার বিকেলে তরিকুল মোস্তাক নিজ বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মিসভা আহ্বান করেন। এতে উপজেলা, পৌর, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির বেশির ভাগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় আসছে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলের কাছে সমর্থন চাইবেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা সম্পাদিকা সালমা আনিকা। সালমা হলেন তরিকুল মোস্তাকের স্ত্রী। সভা সফল করার বিষয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মাহমুদুর সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এ রকম বাস্তবতায় সোমবার বিকেলে কাঁচাবাজারে অবস্থিত হিরণ ঘোষের রেস্তোরাঁয় খেতে যান মাহমুদুর। খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার সময় রেস্তোরাঁর ভেতর পাঁচ থেকে ছয়জন দুর্বৃত্ত ঢুকে তাঁর ওপর হামলা চালায় এবং এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে নুরুল হক কলেজ মাঠ থেকে বের হয়ে একটি দোকানের সামনে যান। তখন সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাযোগে দুর্বৃত্তরা এসে তাঁকে ঘিরে ধরে এবং এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক তরিকুল মোস্তাক বলেন, পরপর দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টি তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে। তাঁরা প্রায় নিশ্চিত নিজ দলের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন দুজন।

মাহমুদুর হাসানের স্ত্রী আসমা আক্তার জানান, দুর্বৃত্তরা তাঁর স্বামীর সারা শরীরে কুপিয়েছে। এখন কথা বলতে পারছেন না। তবে ঘটনার পরপর মাহমুদুল তাঁকে জানিয়েছেন, মূল দলের কোনো একটি পক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন তিনি। দুর্বৃত্তদের মধ্যে কেবল একজনকে চিনতে পেরেছেন। তাঁর নাম মো. পাপ্পু। বাড়ি উপজেলার চামারকোনা।

নুরুল হক বলেন, তাঁদের ব্যক্তিগত শত্রু নেই। তবে রাজনৈতিক শত্রু রয়েছে। নানা কারণে স্বেচ্ছাসেবক লীগ এখন মূল দলের প্রভাবশালী নেতাদের সুনজরে নেই। তাঁর ধারণা তিনিসহ মাহমুদুর দলীয় কোন্দলের শিকার হয়েছেন।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব বলেন, ‘আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত হয়ে যাবে। তখনই সবকিছু স্পষ্ট হবে।’

কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সামা ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘মাহমুদুরের ওপর হামলার ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি। তবে
ওই পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি।’