দুর্লভ এক সাদা বুলবুলি

একটি অ্যালবিনো বুলবুলি।  ছবি: মুজাহিদুল ইসলাম
একটি অ্যালবিনো বুলবুলি। ছবি: মুজাহিদুল ইসলাম

গ্রামের বাড়ি এসেছি। সকালে বাড়ির সিঁড়িতে বসে আছি। একটি ছেলে এসে জানাল, পানের বরজে কাজ করছিল সে। অনেক পাখি বরজের কোনায় এসে কিচিরমিচির করে উইপোকা খাচ্ছে। দলে একটা সাদা পাখিও আছে। তবে সেটা দুধরাজ পাখি নয়।

উঠলাম। গ্রামেরই ছেলে। আমার সম্পর্কে একটু-আধটু জানে। তাই ওর বরজশ্রমিক বাবার কথায় খবরটা দিতে এসেছে আমাকে। ওর বাবা আমার প্রাইমারি স্কুলের বন্ধু।

বরজের কাছে এসে দেখি ফিঙে-বুলবুলি-কমলাবউ-লেজপাখা-সুইচোরা-ছাতারে পাখিরা হল্লা করে উইপোকা গিলছে। বরজের বাইরের কোণের ঢিবিতে আজ সকালে কোদাল চালাতেই উইয়ের ছোট ঢিবিটা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। পোকাখেকো পাখিদের মহা উৎসব তাই লেগে আছে।

সাদা পাখিটাকে দেখলাম। অনেক বছর পর সাদা এই বুলবুলি দেখে কী যে ভালো লাগল! প্রশা‌ন্তিতে ভরে গেল বুক। পাঁচ-সাত বছর আগে আমার গ্রামেই একটি সাদা ছাতারে দেখেছিলাম।

এই সাদা কিন্তু পাখিটার স্বাভাবিক রং নয়। সাধারণ রং একনজরে কালচে ধূসর ও বাদামি। মাথা ও মাথার ঝুঁটি পুরোপুরি কালো। এখন যা দেখছি, তা বুলবুলি বা ঝুঁটকুলি। ঢাকা শহর থেকে শুরু করে গ্রামবাংলাসহ পাহাড়-টিলাময় বন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আছে। আমাদের অতিপরিচিত পাখি। এই বুলবুলি সাদা হয়েছে। কারণ, জন্মের পর ওর শরীরের চামড়ায় রঞ্জক পদার্থ স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হয়নি। এ ধরনের পাখি বা প্রাণীকে বলা হয় ‘অ্যালবিনো’। প্রকৃতিতে অ্যালবিনো পাখি দুর্লভ, হঠাৎ হঠাৎ দেখা মেলে। আমি ছাড়াও অনেকে আংশিক অ্যালবিনো (যেমন একটি শালিকের এক ডানা সাদা, অন্য ডানা স্বাভাবিক) ও অ্যালবিনো পাখি দেখেছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে ঢাকার শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণের একটি ঘোমটা দেবদারুর ঘন পাতার ভেতর এক জোড়া বুলবুলির বাসা দেখেছিলাম, যার একটি ছিল স্বাভাবিক রঙের, অন্যটি আংশিক অ্যালবিনো। গ্রামের অ্যালবিনো বুলবুলিটাকে দেখলাম স্বাভাবিক জীবনে আছে, সঙ্গীও আছে। সামনের মৌসুমে বাসাও করতে পারে। আমার গ্রামে বাসা করলে দারুণ একটা বিষয় আমি পেয়ে যাব।

অতিসাধারণ ঝুঁটকুলি বা বুলবুলির ইংরেজি নাম রেড-ভেনটেড বুলবুল। বৈজ্ঞানিক নাম Pycnonotus cafer। দৈর্ঘ্য ২০ সেমি। ওজন ৪২ গ্রাম। মূল খাদ্য বিভিন্ন রকম ফল, পোকামাকড়, তাল-খেজুরের রস ও ফুলের মধুরেণু। গাছের ডালে গোলাকার বাটির মতো বাসা করে ডিম পাড়ে দু-তিনটি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৪-১৫ দিনে।