তালিকাই নিচ্ছে মিয়ানমার, রোহিঙ্গাদের নিচ্ছে না

মিয়ানমারের অনীহার কারণে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি খুব ধীরে হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমারের অনীহার কারণে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি খুব ধীরে হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
>প্রত্যাবাসনের জন্য চার দফায় মোট ১ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিল বাংলাদেশ।

প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারলেও নতুন করে মিয়ানমারের কাছে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে গত ২০ মাসে বাংলাদেশ চার দফায় মিয়ানমারকে ১ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিল। তবে নতুন করে কবে প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ বছরের ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এ ঘটনার প্রায় পৌনে দুই মাস পর গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে ৫০ হাজার ৫০৬ জন রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা দেওয়া হয়। 

এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ের হাতে ২৫ হাজার ৪৮ জন রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি) কামরুল আহসান। আর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮ হাজার ৩২ জন এবং অক্টোবরে ২২ হাজার ৪৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই তিন দফায় বাংলাদেশ ৫৫ হাজার ৫১২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিল মিয়ানমারকে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের অনীহার কারণে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি খুব ধীরে হচ্ছে। বাংলাদেশের দেওয়া ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত ১২ হাজারের মতো রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই শেষ করেছে মিয়ানমার। এর মধ্যে মিয়ানমার ৮ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনের অধিবাসী হিসেবে মেনে নিয়েছে। আার ৬৮ জনকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথম তালিকা হস্তান্তরের পর মিয়ানমার তালিকা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। পরে তালিকার তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশের পাঠানো তালিকা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তুলছে না দেশটি। পর্যায়ক্রমে আরও তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

চীনের মধ্যস্থতায় পরের বৈঠক
গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্য চূড়ান্ত করেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। রোহিঙ্গারা রাজি না থাকায় ওই সময় তাদের রাখাইনে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। রাখাইনের পরিস্থিতিতে গুণগত পরিবর্তন অর্থাৎ সেখানকার নিরাপত্তা, নিজেদের আদি নিবাস বা এর কাছাকাছি কোথাও থাকার মতো বিষয়গুলো নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা এখনো দূর হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে চীনের সরাসরি মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে রাজি হয়েছিল। 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য কী করা উচিত তা নিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিন্ট সোয়েকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা চূড়ান্ত করতে ত্রিপক্ষীয় একটি কমিটি কাজ করবে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দুই দেশের সরকার ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই ত্রিপক্ষীয় কমিটি অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে।

কূটনীতিকরা শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দেওয়া বিবৃতিকে অহেতুক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটা খুব অহেতুক জিনিস। নিউইয়র্কে একটি রেস্টুরেন্টে হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন, আটজন আহতও হন। কয়েক দিন আগে টেক্সাসে একজন মারা গেছেন। নিউইয়র্কে তো পলাতক ওই ব্যক্তিকে ধরতেই পারল না। জাতিসংঘ এটা নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয় না। স্কুলের বাচ্চাদের মেরে ফেলল, তা–ও কেউ বিবৃতি দেয় না। বাংলাদেশে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, সরকার সঙ্গে সঙ্গে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। এটা স্বীকার করতেই হবে। প্রথম দিনই সরকার বলেছে, এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তারপরও এসব কিসের জন্য? আমার কাছে মনে হয়, দে গো বিয়ন্ড দেয়ার নরমস (তারা শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছে)।’