কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগী বাড়ছে না

কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে না। ১০ শতাংশ ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের পদ খালি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ক্লিনিকে সেবাদানকারীদের কাজ তদারকি এবং সেবার মান পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি স্বাধীন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিউনিটি বা তৃণমূল পর্যায়ের সেবা বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য চাহিদা মেটাতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা আছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্তরের স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। সারা দেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এখন চালু আছে। ৬ হাজার গ্রামীণ মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কথা ছিল। মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলছে, এখন প্রায় ১২ হাজার মানুষের জন্য একটি করে ক্লিনিক চালু আছে। ২০২২ সালের মধ্যে আরও প্রায় এক হাজার ক্লিনিক তৈরির পরিকল্পনা সরকারের আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়নে ঢাকা, বাগেরহাট, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও নীলফামারীর সাতটি উপজেলার ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের তথ্য ও পরিসংখ্যান নেওয়া হয়েছে। তথ্যের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ৭৮ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ১৬টি দলগত আলোচনার তথ্য এবং বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে, এসব আলোচনায় ২১৩ জন অংশ নিয়েছিলেন। এ বছরের প্রথম দিকে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়। প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই কর্মসূচির পরিচালক আবুল হাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রকৃত পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। প্রতিবেদনে পদ খালি থাকাসহ যেসব দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে, তা দূর করার উদ্যোগ অবশ্যই নেওয়া হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে আগে গবেষণা করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ধারণা থেকেই কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠা। প্রাথমিক কাজটা শেষ হয়েছে। এখন দরকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে সঠিক অর্থে সক্রিয় রাখা।

রোগী বাড়ছে না
মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলছে, ২০১৪ সালে ৫ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেয়। ২০১৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৮ কোটি ৪৭ লাখ। তবে পরের দুই বছর আর খুব বেশি বাড়েনি। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৮২ লাখ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোগী বা সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যায় প্রায় স্থিতাবস্থা ছিল।

কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধার কথাও বলা হয়েছে। যানবাহন না থাকা, খারাপ রাস্তা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে অনেকে ক্লিনিকের সেবা নেন না।

কারা সেবা নেয়
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সব স্তরের মানুষ ক্লিনিক থেকে সেবা নেয়। তবে সেবা গ্রহণকারীদের ৪৮ শতাংশ দরিদ্র বা অতিদরিদ্র। সেবাগ্রহীতাদের ৭৭ শতাংশ নারী। 

সব বয়সী মানুষই ক্লিনিকে আসে। বেশি আসে ৩০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারী ও পুরুষ। এঁরা প্রায় ৪২ শতাংশ। ৬০ বছরের বেশি রোগী ১৭ শতাংশ। 

সেবা পরিস্থিতি
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হচ্ছেন মূল ব্যক্তি। সপ্তাহে ছয় দিন তাঁর ক্লিনিকে বসার কথা। তাঁকে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের একজন পরিবারকল্যাণ সহকারী। এঁদের সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লিনিকে বসার কথা। কিন্তু এঁরা সপ্তাহের ঠিক কোন দিন বসেন, তা মাত্র ১২ শতাংশ গ্রামবাসীর জানা আছে বলে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, ১০ শতাংশ হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের পদ খালি পড়ে আছে। অর্থাৎ সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কমিউনিটি ক্লিনিক চলছে মূল ব্যক্তি ছাড়াই। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারীর পদও খালি আছে। এত পদ খালি থাকার কারণে অনেক ক্লিনিক থেকে মানুষ ধারাবাহিকভাবে সেবা পায় না।

করণীয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ক্লিনিকগুলোকে আরও কার্যকর করতে কমিউনিটি গ্রুপগুলোকে আরও সক্রিয় করতে হবে এবং তদারকি ও নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। ক্লিনিকগুলোকে আরও কার্যকর করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারেরও ভূমিকা আছে। এ ক্ষেত্রে এনজিওগুলোরও ভূমিকা আছে বলে প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা আছে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এখন মূল চ্যালেঞ্জ প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিককে কার্যকরভাবে সক্রিয় রাখা। আর এ ক্ষেত্রে দরকার যোগ্য লোকবল। সেবার মান না বাড়লে ঘরের পাশের ক্লিনিকেও মানুষ আসবে না।