অবৈধ সম্পদ অর্জন, প্রকৌশলী দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা

দুদক
দুদক

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার বাফার গুদামের সার কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবে পরিচিত মো. নবীর উদ্দিন খান (উপপ্রধান প্রকৌশলী, যান্ত্রিক) ও তাঁর স্ত্রী মোছা. মোহছীনা বেগমের বিরুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে।

আজ বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। সার কেলেঙ্কারির সময় নবীর উদ্দিন বগুড়ার সান্তাহার বাফার গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) ছিলেন। সার লোপাটের ঘটনায় আরেক মামলায়ও আসামি নবীর উদ্দিন।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীন সান্তাহার বাফার গুদাম। দেশে কৃষকদের জন্য সার উৎপাদনের পাশাপাশি ঘাটতি পূরণে সার আমদানি করে থাকে বিসিআইসি। দেশের ২৪টি বাফার গুদামে এসব সার সংরক্ষণ করা হয়। আমদানি করা সার গুদাম পর্যন্ত পরিবহন করা হয় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু সার পরিবহনের সময় নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে দুদক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই বাফার গুদামের ১৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকারও বেশি মূল্যের প্রায় ৫২ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন সরকারি সার কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর একটি মামলা করে দুদক। ওই মামলার আসামি মো. নবীর উদ্দিন খান (উপপ্রধান প্রকৌশলী, যান্ত্রিক) এবং উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক মো. রাশেদুল ইসলাম। এই মামলার তদন্তে নেমে দুদক নবীর উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পদের খোঁজ পায় ।

সান্তাহার বাফার গুদামের সার কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু হয় প্রথম আলোতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘২০ কোটি টাকার সার গেল কই?’ প্রতিবেদনের জের ধরে।

দুদক জানায়, ২০১৮ সালের ওই মামলা তদন্তের সময় নবীর উদ্দিন ও মোহছীনার নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অস্বাভাবিক সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। এরপর চলতি বছরের ২৫ জুন নবীর দম্পতিকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়। এই আদেশ জারির অনুলিপি একাধিকবার তাঁদের বাড়ি নিয়ে গেলেও কোনো সময়ই ওই দম্পতিকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ঠিকানায় নবীর উদ্দিন দম্পতিকে না পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যদের উপস্থিতিতে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ তাঁদের বাড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে নবীর উদ্দিন তাঁদের সম্পদের হিসাব জমা দেন। এতে তিনি মোট সম্পদের পরিমাণ দেখান ৩০ লাখ ৮৩ হাজার ২৮৬ টাকা।

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নবীর উদ্দিনের নামে ৭১টি দলিল পাওয়া গেছে। জমির পরিমাণ ২৬ একরেরও বেশি। এ ছাড়া বাড়ি কেনা, গবাদিপশুর খামার নির্মাণে বিনিয়োগসহ তাঁর ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার ২৩০ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। নবীর উদ্দিনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩২ টাকার অস্থাবর সম্পদেরও খোঁজ মিলেছে। সব মিলে নবীর উদ্দিন দম্পতির ৫ কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৬২ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তাঁদের বৈধ আয়ের উৎস রয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার ১২৩ টাকার। অর্থাৎ এই দম্পতি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১ হাজার ৮৩৯ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

বগুড়া দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই দম্পতির বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়ি আছে। অথচ সম্পদ বিবরণীতে তাঁরা কোনো কিছুই উল্লেখ করেননি। অনুসন্ধানে নবীর দম্পতির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার ২৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর তথ্য পাওয়া গেছে।