সিলেটে 'খ্যাপা' মহিষের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে গুলি

খ্যাপাটে মহিষের তাড়া খেয়ে সন্ত্রস্ত মানুষের ভিড়। কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট। ছবি: সংগৃহীত
খ্যাপাটে মহিষের তাড়া খেয়ে সন্ত্রস্ত মানুষের ভিড়। কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বিচরণ করছিল মহিষটি। সীমান্তের ওপার থেকে আসা মহিষটি ছিল দেশীয় মহিষের চেয়ে দেখতে একটু ভিন্ন রকমের। তা আটক করতে স্থানীয় লোকজন ভিড় করলে হঠাৎ খেপে যায় এটি। একপর্যায়ে খ্যাপা মহিষের তাণ্ডবে আটটি গ্রামে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাড়াতে গিয়ে এর গুঁতোয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। শেষে গুলি করে মহিষটি দুর্বল করা হয়। পরে এটিকে জবাই করা হয়।

একটি মহিষকে বধ করতে আজ বুধবার দুপুর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা সন্ত্রস্ত অবস্থায় কেটেছে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, পাড়ুয়া, কাঁঠালবাড়ি, লম্বাকান্দিসহ আটটি গ্রামের মানুষের। মহিষের আক্রমণে কাঁঠালবাড়ি ও লম্বাকান্দি গ্রামের রিয়াজ আলী (৭০), আবুল হাসেম (৫৫), জামাল উদ্দিন (৩৫), আবুল কালাম (২৫) ও আবদুল গণি (৫৫) স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজির উদ্দিনসহ নয়জন। আহত জামাল উদ্দিন ও আবুল হাসেমকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে ভোলাগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে ওই মহিষ। একপর্যায়ে ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন বাজার ও পাড়ুয়া এলাকার লোকজন মহিষটিকে আটকের চেষ্টা করলে অন্তত সাতজন আহত হন। এরপর কাঁঠালবাড়ি ও লম্বাবাড়ি গ্রামে ঢুকে আরও সাতজনকে আহত করে। সকাল ১০টার দিকে উত্তর রণিখাই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নজির উদ্দিন তাঁর ‘লাইসেন্সধারী’ বন্দুক দিয়ে মহিষটিকে গুলি করেন। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় মহিষের আক্রমণে তিনিও আহত হন। পরে বেলা পৌনে একটায় উপজেলার কাঁঠালবাড়ি লম্বাকান্দি এলাকার সিকান্দর আলী তাঁর ‘লাইসেন্স করা’ বন্দুক দিয়ে চারটি গুলি করে মহিষটিকে দুর্বল করে। পরে এলাকাবাসী এটিকে জবাই করে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মহিষটি গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত এলাকা ভোলাগঞ্জে ঘুরছিল। খ্যাপাটি স্বভাবের দেখায় মহিষটি আক্রমণ করে থাকতে পারে—এমন আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বন বিভাগসহ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছিল। এ অবস্থায় আজ দুপুরের দিকে কিছু মানুষ মহিষটি ধরতে গেলে আক্রমণের এসব ঘটনা ঘটে।

ভারতের ভোলাগঞ্জ সীমান্ত এলাকা হয়ে যে এলাকায় মহিষটি অবস্থান করছিল, সেটি পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের। স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, মহিষটি জ্যান্ত ধরে নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় অন্তত হাজার খানেক মানুষ তৎপর ছিল। কিন্তু তা করতে গিয়ে একের পর এক আক্রমণে আহত হওয়ার ঘটনায় শেষে চরম আতঙ্ক অবস্থা বিরাজ করে। মানুষের নিরাপত্তায় শেষে গুলি করে মহিষটি ধরা হয়। তখন অবস্থা খারাপ থাকায় মহিষটি জবাইয়ের পর জড়ো হওয়া লোকজনদের মধ্যে মাংস বণ্টন করা হয়।