সাবেক সহকারী কর কমিশনারকে গ্রেপ্তার করল দুদক

করের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খুলনার সাবেক সহকারী কর কমিশনার মো. মেঝবাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নগরের বড় বয়রা পালপাড়া এলাকার নিজ বাড়ির সামনে থেকে আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দুদকের সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়।

মেঝবাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে করদাতাদের দেওয়া ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। এর আগে দুপুরের দিকে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাওন মিয়া বাদী হয়ে দুদক কার্যালয়ে মেঝবাহ উদ্দিনের নামে মামলা করেন। মামলায় ওই পরিমাণ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

দুদক সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, জনগণের করের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই সহকারী কর কমিশনারকে আগেই বরখাস্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। পরে ওই ঘটনা নিয়ে মামলা হলে সেটার তদন্তের দায়িত্ব পায় দুদক। প্রাথমিক তদন্তে মেঝবাহ উদ্দিনের টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। দুপুরের দিকে মামলা পর খুলনা কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের অনুমতি নেওয়া হয়।

নাজমুল হাসান পৌনে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার করে মেঝবাহ উদ্দিনকে দুদক খুলনা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

বিভাগের অনুমতি নিয়ে মেঝবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন খুলনা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার (সদর প্রশাসন) খোন্দকার তারিফ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, খুলনা মহানগর হাকিমের আদালতে করা মামলাটি প্রথমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তা সঠিক না হওয়ায় পরে বিচারক ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেন দুদককে। দুদক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে।

খোন্দকার তারিখ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৭ সালের ৮ মে থেকে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সহকারী কর কমিশনার মেঝবাহ উদ্দিন আহমেদ খুলনা কর অঞ্চলের অধীন বাগেরহাটে (কর সার্কেল ১৪) কর্মরত ছিলেন। ওই সময় পর্যন্ত করদাতাদের কাছ থেকে আদায় করা রাজস্ব, পে-অর্ডার, ডিডি, ক্রস চেক সরকারি কোষাগারে চালানের মাধ্যমে জমা না দিয়ে বাগেরহাট সোনালী ব্যাংক শাখার বেতন হিসাব নম্বরে (অ্যাকাউন্টে) জমা দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সেই ব্যাংক হিসাব থেকে নিজের স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪২৩ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। মোট ৪০টি চেকের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করেন মেঝবাহ উদ্দিন।

খোন্দকার তারিখ আরও বলেন, বাগেরহাট থেকে মেঝবাহ উদ্দিনকে ভেড়ামারা এবং সেখান থেকে মাগুরায় বদলি করা হয়। সেখানেও একইভাবে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার ৬ টাকা আত্মসাৎ করেন। টাকার অসংগতি ধরা পড়ায় খুলনা কর কমিশন থেকে অভ্যন্তরীণ এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ১২ মে ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ১৩ মে মেঝবাহ উদ্দিনকে শোকজ করা হয়। পরে ১৯ মে ওই ঘটনা রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে ওই দিনই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।