মাল্টা চাষে ফিরল সুদিন

আড়াই বছর আগেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুরবস্থায় ছিলেন আসাদুল হক হাওলাদার। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করতেই তিনি হিমশিম খেতেন। সন্তানদের পড়ালেখাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে মাল্টা চাষ করে তাঁর দিন বদলে গেছে। সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। ছেলেমেয়েরাও বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।

আসাদুল হকের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামে। তাঁর সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। মোল্লা গ্রামেই প্রায় অর্ধশত কৃষক মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। আর আগৈলঝাড়ায় মাল্টা চাষে নেমেছেন কমপক্ষে ১০০ কৃষক।

২০১৭ সালে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মাল্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম শুরু করেন। দ্বিতীয় শস্য বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় কৃষি কার্যালয় থেকে বিনা মূল্যে বারি জাত-১–এর মাল্টা গাছের চারা সরবরাহ করা হয়। আসাদুল হক প্রথমে ৩ শতাংশ জমিতে ৩২টি মাল্টার চারা রোপণ করেন। প্রায় দেড় বছর পরিচর্যার পর গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০টি ফল ধরে।

আসাদুল হক বলেন, ‘প্রথম বছর স্বজনদের মধ্যে অনেক মাল্টা বিলিয়ে দিয়েও ১০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এ বছর শুরুতেই ৩০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। এখনো গাছে প্রচুর ফল রয়েছে। মাল্টা চাষে আমার অভাব দূর হয়েছে। আমি স্বাবলম্বী হয়েছি।’

বর্তমানে আসাদুল হকের ৫০ শতাংশ জমিতে মাল্টার বাগান রয়েছে। বাগান পরিচর্যায় তাঁর স্ত্রী হ্যাপি আক্তারও সহায়তা করেন। আসাদুল হক বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাগানের পরিচর্যা করি। ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। আমরা মাল্টাবাগান আরও বাড়াতে চাই। আমার দেখাদেখি চাচাতো ভাইসহ গ্রামের ৪০-৫০ জন মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। বারি জাত-১–এর মাল্টা খুবই মিষ্টি। স্থানীয় বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি মাল্টা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।’

আসাদুল হক হাওলাদারকে অনুসরণ করে পাশের বেলুহার গ্রামে মাল্টা চাষ করেছেন জলিল শরীফ (৪৫)। তিনি জানান, তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছে ৪০-৫০টি ফল ধরেছে।

একইভাবে মাল্টা চাষ করছেন উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী গ্রামের খলিলুর রহমান। তিনি জানান, গাছ লাগানোর এক বছর পরই ফল এসেছে। তবে প্রথমে পরিমাণ কম ছিল। এ বছর প্রতিটি গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। নুয়ে পড়া ডালে বাঁশ বেঁধে দিতে হয়েছে। বছরে দুবার ফল সংগ্রহ করা যাবে। মাল্টাবাগানের এক পাশে কমলা, জলপাই, আমলকী, লিচু, জাম্বুরা ও আমগাছের চাষ শুরু করেছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, এ উপজেলায় ২৫টি প্রদর্শনী প্লটে মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। ওই প্রদর্শনী দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আগ্রহী ব্যক্তিদের উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

নাসির উদ্দিন জানান, সমতল ভূমির দোআঁশ মাটি মাল্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। প্রাকৃতিক সার, পোকামাকড় দমনে বিশেষ উপায়ে তৈরি বালাইনাশক ব্যবহার ও সঠিক পরিচর্যা করলে মাল্টার ফলন ভালো পাওয়া যায়।