অভিজিতের শোকবিহ্বল বাবা সাক্ষ্য দিতে চান না

অধ্যাপক অজয় রায় ও অভিজিৎ রায়। ফাইল ছবি
অধ্যাপক অজয় রায় ও অভিজিৎ রায়। ফাইল ছবি

ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার বিচারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তৃতীয় দফায় গতকাল বুধবার মামলার বাদী ও অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়সহ প্রথম পাঁচজন সাক্ষীর কেউই আদালতে হাজির হননি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অজয় রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘শোকবিহ্বল পিতা হয়ে আমি আদালতে গিয়ে বক্তব্য দিতে পারব না। তবে এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ তিনি সাক্ষ্য দিতে না গেলে আসামিদের বিচারপ্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অজয় রায় বলেন, ‘আমি তো মামলা করেছি। এখন পুলিশ ও অন্য সাক্ষীদের উচিত আসামিদের বিচারের ব্যবস্থা করা। আমার মনে হয় না বিচারে কোনো সমস্যা হবে।’

প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘অভিজিতের মরদেহ অ্যানাটমি বিভাগে ডিপ ফ্রিজে রাখা আছে। এটা থাকবে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। বিচারের প্রয়োজনে মাননীয় বিচারক এটি দেখতে চাইতে পারেন। সেটি আমার সামনে বা আড়ালে হতে পারে। সেই দৃশ্য আমার জন্য অকল্পনীয়।’

গত ১ আগস্ট নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য তিনটি তারিখ নির্ধারণ করে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। সর্বশেষ সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল গতকাল। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় আগামী ২৮ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

এর আগে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম তারিখ ১১ সেপ্টেম্বরে কোনো সাক্ষী হাজির হননি। দ্বিতীয় তারিখ ৬ অক্টোবর দুজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। তবে সেদিন পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় আটক চার আসামির কাউকে আদালতে হাজির করা যায়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার বিচারের জন্য বাদী অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি। তাঁকে কয়েক দফা ফোন করে আদালতে আসতে অনুরোধ করেছি। তিনি আসবেন না বলে জানিয়েছেন।’

অজয় রায়ও বলেন, তাঁর সঙ্গে পুলিশ ও আইনজীবী যোগাযোগ করেছেন। বিচারপ্রক্রিয়ার এই বেদনা তিনি সহ্য করতে পারবেন না বলে তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন।

সৈয়দ জিয়াউলসহ অভিযোগপত্রভুক্ত অপর জঙ্গিরা হলেন আরাফাত রহমান ওরফে শামস ওরফে সাজ্জাদ, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল ওরফে সাকিব, আকরাম হোসেন আবির ওরফে আদনান ও শফিউর রহমান ফারাবী। তাঁদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

কারাগারে আটক চার আসামিকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মোট ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ক্রমানুসারে মোট পাঁচজনকে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করা হয়। তাঁরা হলেন অধ্যাপক অজয় রায়, মো. মাসুদুর রহমান, আলিমুজ্জামান, মো. সেলিম ও মো. আফজাল হোসেন। বুধবার সকালে আটক চার আসামিকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে ঢাকায় আদালতে হাজির করা হয়।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কাছে দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে অভিজিৎ রায় খুন হন। এ সময় আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রী রাফিদা আহমেদের দুটি আঙুল কাটা পড়ে। তাঁরা দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে তাঁরা দেশে এসেছিলেন। অভিজিৎ রায়ের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় পরদিন শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।