হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা: হামলাকারী নিহত জঙ্গিদের ফরেনসিক প্রতিবেদন দেয়নি এফবিআই

হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার মামলায় গ্রেপ্তার আটজনকে আদালতে তোলা হয়। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর। ছবি: আসাদুজ্জামান
হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার মামলায় গ্রেপ্তার আটজনকে আদালতে তোলা হয়। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর। ছবি: আসাদুজ্জামান

উচ্চতর তদন্তের জন্য গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের রক্ত ও চুলের নমুনা পাঠানো হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ল্যাবে। তবে এফবিআই এই নমুনার কোনো ফরেনসিক প্রতিবেদন পুলিশকে দেয়নি। তবে একই নমুনার বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দেওয়া ফরেনসিক প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবির আজ বৃহস্পতিবার আদালতকে এসব তথ্য জানান।

বহুল আলোচিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলাটির বিচার চলছে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। আজ এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেছেন। এই পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। ২১ অক্টোবর এই তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবর রহমান।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজানে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাঁকর্মী। হামলার আড়াই বছরের মাথায় গত বছরের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজানে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর আজ আদালতে সাক্ষ্য দেন । ছবি: আসাদুজ্জামান
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর আজ আদালতে সাক্ষ্য দেন । ছবি: আসাদুজ্জামান

আদালতে যা বললেন তদন্ত কর্মকর্তা
পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবির এই মামলার ১১৩তম সাক্ষী। হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা আদালতকে জানান হুমায়ুন কবির। তিনি আদালতে বলেন, এই মামলায় তদন্তভার পাওয়ার পর তিনি একাধিক দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সব আলামত। এই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে যেসব আলামত জব্দ করেছিলেন, তার তালিকা আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়। জব্দ করা আলামতও আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতকে দেখানো হয় এ–সংক্রান্ত ফরেনসিক প্রতিবেদন।

হুমায়ুন কবির আদালতকে আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে যেসব আলামত জব্দ করা হয়েছিল, তার ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য পাঠানো হয় সিআইডিতে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া অস্ত্র, গুলি ও গুলির খোসার ব্যালিস্টিক প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে শুরু করে লাশ হস্তান্তরসহ যা যা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা সবিস্তারে আদালতকে জানান মামলার এই তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আদালতকে জানান, হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় হামলাকারীসহ মোট ২৯ জন নিহত হন। তাঁদের প্রত্যেকের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়। পরে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় উদ্‌ঘাটন করেন তিনি। করা হয় তাঁদের ডিএনএ প্রোফাইল। হামলাকারী পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের পরিবার লাশ গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের ঢাকার জুরাইনে কবরস্থ করা হয়।

হুমায়ুন কবির আদালতকে আরও বলেন, এই হামলার আগে–পরে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের জবানবন্দি তিনি রেকর্ড করেন। এ ছাড়া হামলায় জীবিত উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করানোর ব্যবস্থা করেন। নেন হোলি আর্টিজান বেকারির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবানবন্দি। জব্দ করেন নানা ধরনের আলামত। সর্বোপরি হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেসব কথাও আদালতে তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। তিনি আদালতকে বলেন, এই হামলায় জড়িত জঙ্গি ব্যক্তিদের আগের অপরাধবিষয়ক রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেন।

আজ দুপুরে হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার মামলায় গ্রেপ্তার আট জঙ্গিকে আদালতের এজলাসকক্ষে তোলা হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামি হলেন রাশেদ ওরফে র‍্যাশ, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খান। আসামিপক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনসহ অন্য আইনজীবী।